ঢাকা, শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

শীতের দিনে মন ভালো রাখবে যেসব খাবার

২০২৫ ডিসেম্বর ১৩ ১১:০৫:১০
শীতের দিনে মন ভালো রাখবে যেসব খাবার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিসেম্বর এলেই শীত তার উপস্থিতি জানান দেয় কনকনে ঠান্ডার মাধ্যমে। এই সময়টায় শীত মোকাবিলার সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয় উপায় হয়ে ওঠে খাবার। খেজুরের রস, পিঠা-পায়েস আর নানা ধরনের শীতের রান্না ঘিরে তৈরি হয় উৎসবের আবহ। তবে শুধু পেট ভরালেই শরীর ভালো থাকবে—এমনটা নয়। সঠিক খাবার বেছে না নিলে শীতের আনন্দ উপভোগের বদলে শরীর ও মন দুটোই সমস্যায় পড়তে পারে।

মানুষের শরীর অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় ভিন্ন কাঠামোর হওয়ায় পুষ্টির চাহিদাও আলাদা। শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুস্থ রাখতে নির্দিষ্ট ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের প্রয়োজন হয়। চোখ ভালো রাখতে ভিটামিন এ, ত্বকের জন্য ভিটামিন বি এবং হাড় শক্ত রাখতে ভিটামিন ডি অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে শরীরে ভালো লাগার হরমোন নিঃসরণ বাড়ে, যার ফলে মন থাকে শান্ত ও প্রফুল্ল।

মন ভালো রাখার ক্ষেত্রে ডোপামিন হরমোনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই হরমোনের নিঃসরণ অনেকটাই নির্ভর করে অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপর। অন্ত্রে যত বেশি উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে, ডোপামিনের মাত্রাও তত বাড়ে। তাই খাদ্যতালিকায় ভালো চর্বি, আঁশসমৃদ্ধ ও গাঁজানো খাবার রাখা প্রয়োজন। শীতকালীন শাকসবজি যেমন শিমের বিচি, বরবটি ও মটরশুঁটি অন্ত্রের জন্য উপকারী। পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল, অলিভ অয়েল ও টক দই ডোপামিন বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার অন্ত্রের ক্ষতি করে, তাই এসব এড়িয়ে চলাই ভালো।

সেরোটোনিন হরমোনও মানুষের সুখ ও মানসিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই হরমোনের প্রায় পুরোটা উৎপন্ন হয় অন্ত্রে, আর মাত্র অল্প অংশ মস্তিষ্কে কাজ করে। সেরোটোনিন ঘুম, মুড, স্মৃতি ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে এই হরমোনের নিঃসরণ স্বাভাবিক থাকে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন, আঁশ, ভিটামিন বি-১২ ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার সেরোটোনিন বাড়াতে সাহায্য করে। শীতকালে ব্রকলি, বাঁধাকপি, গাজর, শিমসহ বিভিন্ন মৌসুমি সবজি এবং সকালের নরম রোদ মন ভালো রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুমও এই হরমোনের নিঃসরণে সহায়ক।

শীতকালে শরীরের ব্যথা ও অস্বস্তি বাড়ে, আর এই সময় এন্ডোরফিন হরমোন প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। মানসিক চাপ, বিষণ্নতা বা অতিরিক্ত ওজন এন্ডোরফিনের নিঃসরণ কমিয়ে দিতে পারে। তবে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার এন্ডোরফিন বাড়াতে বিশেষভাবে সহায়ক। শীতকালে পাতিলেবু, পেয়ারা, কমলা, জাম্বুরা ও মোসাম্বির মতো ফল খেলে শরীরে ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মনও চাঙা থাকে। টমেটো, কাঁচা মরিচ, ক্যাপসিকাম ও পালংশাক শরীরকে প্রয়োজনীয় খনিজ ও আঁশ সরবরাহ করে।

শীতকালীন প্রায় সব শাকসবজি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। পালংশাক, গাজর, বিটরুট, ব্রকলি, টমেটো ও ক্যাপসিকাম নিয়মিত খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমার পাশাপাশি শরীরের ভালো কোলেস্টেরল বাড়ে এবং ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমে আসে। তাই শীতকালীন সবজি হতে পারে সুস্থ থাকার অন্যতম নির্ভরযোগ্য উপাদান।

আমাদের শরীরের একটি অবহেলিত কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো ক্ষুদ্রান্ত্র। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং অতিরিক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে এখানে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে হজম প্রক্রিয়ার ওপর, তৈরি হয় গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, ফ্যাটি লিভার ও কিডনি সমস্যার ঝুঁকি। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া নষ্ট করে দেয়। তাই অন্ত্র সুস্থ রাখা মানেই শরীর ও মন দুটোই সুস্থ রাখা।

সব মিলিয়ে বলা যায়, শীতকাল শুধু ঠান্ডা নয়, বরং সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের মাধ্যমে শরীর ও মন সুস্থ রাখার সেরা সময়। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম ও হালকা ব্যায়াম শীতকে উপভোগ্য করে তুলতে পারে।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

লাইফ স্টাইল এর সর্বশেষ খবর

লাইফ স্টাইল - এর সব খবর



রে