ঢাকা, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছাড়াল ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা

২০২৫ নভেম্বর ২৬ ১৭:০৮:১২
ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছাড়াল ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংকিং খাতে সংকট যেন আরও গভীর হচ্ছে। নতুন হিসাব অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিমাণ শুধু আর্থিক খাতের দুর্বলতা নয়, বরং পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করছে। তারা সতর্ক করে বলছেন—দ্রুত সংস্কার না হলে পরিস্থিতি আরও ভারী হয়ে ওঠবে।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এই উদ্বেগজনক চিত্র উঠে আসে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারি ও নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে যেসব ঋণ এত দিন নিয়মিত হিসেবে দেখানো হতো, সেগুলোর প্রকৃত অবস্থাও এখন পরিষ্কার হচ্ছে। অনেক অনাদায়ি ঋণ নতুনভাবে মন্দ ঋণ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় খেলাপির পরিমাণ দৃশ্যত আরও বেশি হয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্টদের ধারণা, বহু বছর ধরে বিভিন্ন সুবিধা ও প্রভাবের মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল, সেগুলো দীর্ঘদিন লুকিয়ে থাকলেও এখন একে একে প্রকাশ পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রকৃত তথ্য সামনে আসায় পরিস্থিতি বোঝা সহজ হলেও এটি একইসঙ্গে অস্বস্তি ও ঝুঁকির সংকেতও তৈরি করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, সেপ্টেম্বর শেষে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা—মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। শুধু এক বছরেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭১৮ কোটি, যেখানে গত সেপ্টেম্বর শেষে অঙ্ক ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা।

তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য। ২০২৫ সালের জুন প্রান্তিকে মোট ঋণ ছিল ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭৮ কোটি, তার বিপরীতে খেলাপি ছিল ৬ লাখ ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি—যা ছিল ৩৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। তিন মাস পরে সেই অঙ্কই বেড়ে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটির বেশি।

আইএমএফের শর্তও এ সংকটকে ঘিরে নতুন চাপ তৈরি করেছে। ডলার সংকট মোকাবিলায় পাওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের বাকি দুই কিস্তি পেতে হলে ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে খেলাপি কমিয়ে ৫ শতাংশ এবং সরকারি ব্যাংকে ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। অথচ বর্তমানে সরকারি ব্যাংকগুলোতেই প্রায় ৫০ শতাংশ ঋণ খেলাপি অবস্থায় রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে মোট খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সদৃশ্যতা, নিয়ন্ত্রণহীন ঋণ বিতরণ ও অপশাসনের কারণে খেলাপি ঋণ ক্রমাগত ফুলে উঠেছে। অর্থনীতিবিদদের দাবি—তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষায় ব্যাংক থেকে লুট করা বিপুল অর্থের এক বড় অংশ বিদেশেও পাচার হয়েছে, যার ফল আজ পুরো খাতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে