ঢাকা, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

বাংলাদেশ সার্ভিসের টানা দশ বছর লোকসান

২০২৫ নভেম্বর ১০ ২২:৩৮:২০
বাংলাদেশ সার্ভিসের টানা দশ বছর লোকসান

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিএসএল) টানা দশম বছরের মতো লোকসানের মুখ দেখেছে। ২০২৪–২৫ অর্থবছরেও কোম্পানিটি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি; বরং আরও এক বছর লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়েছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বিএসএল-এর নিট লোকসান হয়েছে ৮৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এই অর্থবছরেও বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়নি— টানা ২০১৩–১৪ অর্থবছর থেকে কোম্পানিটি ডিভিডেন্ডহীন অবস্থায় রয়েছে।

চলতি অর্থবছরের শেষে কোম্পানিটির সঞ্চিত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৭০৫ কোটি টাকায়, যা দীর্ঘ সময় ধরে চলমান আর্থিক সংকটেরই প্রতিফলন।

বিএসএল-এর শেয়ারদর বর্তমানে ৫ টাকা ২০ পয়সায় স্থির রয়েছে, যা অভিহিত মূল্যের নিচে। সরকারের হাতে রয়েছে কোম্পানির ৯৯.৬৮ শতাংশ শেয়ার, ফলে বাজারে এর ফ্রি-ফ্লোট শেয়ার খুবই সীমিত।

এদিকে, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও লোকসানের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির নিট লোকসান হয়েছে ২৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা, যা শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হিসেবে দাঁড়ায় ২ টাকা ৪৮ পয়সা।

অডিটরদের প্রতিবেদনে কোম্পানির আর্থিক টিকে থাকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএসএল-এর চলতি দায় বর্তমান সম্পদের চেয়ে ৩০৮ কোটি টাকা বেশি, এবং এর মোট ঋণের পরিমাণ ৯০৭ কোটি টাকা, ঋণ-ইকুইটি অনুপাত ০.৪২।

তবে বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোম্পানিটি ঋণ পুনর্গঠন ও সুদ মওকুফের বিষয়ে ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনা করছে। তাই তারা বিশ্বাস করে, কোম্পানি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে।

বিএসএল ৭৩২ কোটি টাকায় হোটেল সংস্কার প্রকল্প সম্পন্ন করেছিল, যার মধ্যে ৫৭৩ কোটি টাকার দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া হয় অগ্রণী ব্যাংক থেকে। সুদসহ এই ঋণ এখন প্রায় ১ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা কোম্পানির আর্থিক ভার বহুগুণ বাড়িয়েছে।

অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানির লোকসানের পেছনে একাধিক বহিরাগত কারণ কাজ করেছে— যেমন বিদেশি ভ্রমণ পরামর্শ, নিরাপত্তা সতর্কতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, মিছিল-অবরোধসহ বিভিন্ন ঘটনায় হোটেলে অতিথি আগমন ও করপোরেট বুকিং কমে গেছে।

কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৪ সালে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকার মুনাফা করেছিল। ওই বছর সংস্কারের জন্য হোটেলটি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়, এরপর থেকেই কোম্পানিটি ধারাবাহিক লোকসানে রয়েছে।

দেশের প্রথম পাঁচতারকা হোটেল হিসেবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকার যাত্রা শুরু হয় ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি। প্রথমে এটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপ পরিচালনা করত ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে শেরাটন ঢাকা নামে পরিচালিত হয় ২০১১ সাল পর্যন্ত।

এরপর স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় নাম হয় রূপসী বাংলা হোটেল। দীর্ঘ সংস্কার শেষে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এটি আবারও ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা নামে নতুনভাবে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু পুনরায় চালুর পর থেকেও প্রতিষ্ঠানটি এখনো মুনাফায় ফিরতে পারেনি।

বর্তমানে বিএসএল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বলাকা এক্সিকিউটিভ লাউঞ্জ এবং বিএসএল অফিস কমপ্লেক্স পরিচালনা করছে। এর আগে প্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি) পরিচালনা করত, যা এ বছর জানুয়ারিতে পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউডি)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে