ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের প্রতারণা, নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি

২০২৫ নভেম্বর ০৪ ২০:১৩:২২
আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের প্রতারণা, নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি আনোয়ার গ্যালভানাইজিং সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড না দেওয়ার জন্য ধারাবাহিক লোকসান দেখিয়েছে। শেয়ার কারসাজির জন্য চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মুনাফার পাহাড় দেখিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ও বাজার সংশ্লিষ্টরা কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় ৩০ জুন, ২০২৫ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ডিভিডেন্ড না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। কারণ কোম্পানিটি সমাপ্ত অর্থবছরের তিন প্রান্তিকসহ বার্ষিক প্রতিবেদনেও লোকসান দেখিয়েছে।

ওই একই বোর্ড সভায় কোম্পানিটির জুলাই-সেপ্টেম্বর’২৫ সমাপ্ত প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দেখিয়েছে ২ টাকা ২৬ পয়সা। অথচ কোম্পানিটি ৩০ জুন, ২০২৫ পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখিয়েছে ১২ টাকা ৩২ পয়সা। অথচ তিন মাসের ব্যবধানে বিশাল লোকসান কাটিয়ে কিভাবে ২ টাকা ২৬ পয়সা মুনাফা করেছে?

সমাপ্ত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’২৪) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ৮৮ পয়েসা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর’২৪) শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯৩ পয়সা। আর তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ’২৪) শেয়ারপ্রতি লোকসান দেখিয়েছে ১ টাকা ৩৯ পয়সা। ধারাবাহিকভাবে ৩ প্রান্তিকে বা ৯ মাসে (জুলাই’২৪-মার্চ’২৫) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ টাকা ১০ পয়সায়। আর শেষ প্রান্তিকে (মার্চ-জুন’২৫) লোকসান আরও বেড়েছে। যার কারণে সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি লোকসন দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৩২ পয়সা।

এদিকে, ভালো ডিভিডেন্ড ঘোষণার পরও অনেক কোম্পানির দর কমে যাচ্ছে, সেখানে ডিভিডেন্ড না দেয়ার সিদ্ধান্তের পরও এই কোম্পানির দর উল্টো আকাশচুম্বী হয়েছে। ডিভিডেন্ড না দেয়ার সিদ্ধান্তের পরদিনই কোম্পানিটির শেয়ার দর সর্বোচ্চ বেড়েছে। ২৬ অক্টেবরের পর কোম্পানিটির দর মাত্র একদিন কমেছে।

আজ কোম্পানিটির দর ৬ টাকা ৬০ পয়সা বা ৬.৯৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১ টাকা ১০ পয়সায়, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দর। গত ১৫ মে এক বছরের মধ্যে কোম্পানিটির সর্বনিম্ন দর ৫২ টাকা ৩০ পয়সা ছিল। মাত্র সাড়ে ৫ মাসেই কোম্পানিটির দর দ্বিগুনের বেশি বেড়েছে। যেখানে লোকসান দেখানোর পর কোম্পানিটির দর কমাই ছিল স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু সেটা না হয়ে উল্টো চিত্র দেখা গেছে, যা বাজার সংশ্লিষ্টদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে।

গত ১৯ অক্টোবর কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ৫৬ টাকা ৮০ পয়সা। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে এর দাম বেড়ে ৫৬ টাকা ৩০ পয়সা বা ৪৩.৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এর পেছনে কিছু অদৃশ্য কারণে শেয়ারটির মূল্য এত দ্রুত বেড়েছে। কোম্পানির দেওয়া মুনাফার তথ্য বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না, আবার আগের বছরের বিশাল লোকসান সম্পর্কিত তথ্যও সন্দেহজনক। শেয়ারটির দাম হাঁকানোর পিছনে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততার গুঞ্জনও রয়েছে। এসব অনিয়ম ও দুবৃত্তপনার কারণে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এক সময়ের ৩০০ টাকায় উঠা সী পার্ল রিসোর্টের শেয়ার এখন ৪০ টাকার নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আবর ক্রেজে থাকা ২০০ টাকার এমারেল্ড ওয়েল এখন ১৫ টাকার নিচে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এসব আকাশচুম্বী শেয়ার কিনে বহু বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাই বাজার বিশেষজ্ঞরা আনোয়ার গ্যালভেনাইজিংয়ের আর্থিক প্রতিবেদন এবং শেয়ার দাম ও লেনদেন নিয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

এসএখান/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে