ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

গুজবের আগুনে জ্বলছে ফাইন ফুডস, তদন্তের দাবি বাজার সংশ্লিষ্টদের

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৭ ১৪:১৪:৫০
গুজবের আগুনে জ্বলছে ফাইন ফুডস, তদন্তের দাবি বাজার সংশ্লিষ্টদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিনিয়োগকারীদের চোখ ধাঁধানো শেয়ারমূল্য বৃদ্ধিতে ফাইন ফুডস সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। তবে এই উত্থানের পেছনে মূলত অস্বাভাবিক লেনদেন ও মনগড়া আর্থিক প্রতিবেদন স্পষ্ট কারসাজির ইঙ্গিত রয়েছে—এমন অভিযোগ বাজারসংশ্লিষ্টদের। অনেকেই মনে করছেন, হঠাৎ এই উল্লম্ফন আসলে কাগুজে মুনাফার ফাঁদ, যার চূড়ান্ত দায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ঘাড়েই এসে পড়বে।

ফাইন ফুডসের শেয়ার শেয়ারবাজারে অন্যতম শীর্ষ কারসাজির শেয়ার। বছরজুড়ে এটি ধারাবাহিকভাবে কারসাজির কবলে থাকে। শেয়ারদামের যে কোনো অস্বাভাবিক উত্থান বা পতনের পেছনে সাধারণ আর্থিক কারণের চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের সরাসরি কারসাজি। বাজারের অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরাও এই নিয়ন্ত্রণ ও কৌশল দেখলে হতবাক হয়ে যান, কারণ প্রকাশিত তথ্য দিয়ে শেয়ারমূল্যের এই ওঠানামাকে ন্যায্যতা দেওয়া সম্ভব নয়।

এখানেই জন্ম নিচ্ছে প্রশ্ন—কোন শক্তি বা কারসাজি এই উত্থানকে ত্বরান্বিত করছে? বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, যারা একমি পেস্টিসাইডের শেয়ারে জালিয়াতি ও কারসাজিরে নেতৃত্বে ছিলেন, তারাই ফাইন ফুডসের শেয়ারের অবৈধ লাফে জড়িত। বাজারে তাদের কৌশলগত হস্তক্ষেপ ও প্রভাবই শেয়ারদামের অস্বাভাবিক ওঠানামার মূল কারণ। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রম সৃষ্টি করে নতুনদের টেনে আনা হয়েছে, যারা যেকোন সময় বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি বিএসইসি একটি নিরপেক্ষ ও কঠোর তদন্ত চালায়, তাহলে প্রকৃদ কারসাজিকারীদের মুখ উন্মোচিত হবে এবং বাজারে স্বচ্ছতার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।

২০২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ফাইন ফুডস প্রায় ৪০০ শতাংশ নেট মুনাফা বৃদ্ধি দেখিয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীর চোখে এটি বিশাল ইতিবাচক খবর মনে হলেও, বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। প্রশ্ন ওঠে—একটি মাঝারি আকারের কোম্পানি, যার উৎপাদন বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে, কীভাবে এমন অস্বাভাবিকভাবে বিশাল মুনাফা অর্জন করতে পারে? যে কোম্পানিটি আগের বছরগুলোতেও লোকসানে ছিল এবং কোনভাবে অস্তিত্ব টিকেয়ে রেখেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন ও শেয়ারদামের উত্থানের মধ্যে স্পষ্ট মিল নেই, যা ইঙ্গিত দেয় যে মুনাফার এই বৃদ্ধিতে কারসাজি বা কৌশলগত লেনদেন জড়িত রয়েছে।

ফাইন ফুডসের শেয়ার এক বছর আগেও ১৫০ টাকার নিচে লেনদেন হয়েছিল, কিন্তু এখন বছরের সর্বোচ্চ দাম ৩২৫ টাকায় পৌঁছেছে। সর্বশেষ ক্লোজিং দর দাঁড়িয়েছে ৩১৪ টাকা ৯০ পয়সায়। এ অস্বাভাবিক ওঠানামা প্রমাণ করে, শেয়ারটি বাজারে অব্যাহতভাবে কারসাজি ও কৌশলগত লেনদেনের কবলে রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা, কারণ দাম যে হঠাৎ বেড়ে যায়, তা মোটেও স্বাভাবিক বাজার প্রবাহের ফল নয়।

কোম্পানির ডিভিডেন্ড ইতিহাসও গভীরভাবে রহস্যজনক। ২০২১ সালে কোম্পানিটি ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করেছিল, এরপর ২০২২ সালে ১.৫০ শতাংশ, ২০২৩ সালে ১.২৫ শতাংশ এবং হঠাৎ ২০২৪ সালে ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এই ঘোষিত ডিভিডেন্ডের বড় অংশই নির্ধারিত বিনিয়োগকারীর হাতে পৌঁছায়নি। এ ধরনের অনিয়ম স্পষ্টভাবে দেখায়, বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার ক্ষেত্রে কতটা বিপদে পড়তে পারে।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, অস্বাভাবিক লেনদেন, হঠাৎ ডিভিডেন্ড বৃদ্ধি এবং মুনাফার অপ্রত্যাশিত উত্থান শুধুমাত্র বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকি নয়, এটি বাজারের আস্থা নষ্ট করার স্পষ্ট প্রতীক। যারা শুধুমাত্র শেয়ারের দামের ওঠানামার দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তারা খুব সহজেই বড় ক্ষতির শিকার হতে পারেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গোপন তথ্য, অভ্যন্তরীণ কারসাজি এবং অস্বচ্ছ হিসাবের প্রভাব কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা ফাইন ফুডসের কয়েক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন এবং শেয়ার লেনদেনের কার্যক্রম নিরপেক্ষ ও কঠোর তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বিশেষভাবে নজর দেওয়া উচিত—শেয়ার কারা লেনদেন করছে এবং কোন গ্রুপ বা গোষ্ঠীর কাছে অধিকাংশ শেয়ার কেন্দ্রীভূত। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের তদন্ত চালানো হলে অবিলম্বে বোঝা যাবে কে সত্যিকারের রাঘব-বোয়াল, যারা বছরের পর বছর ধরে বাজারে কারসাজির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মূলধন শোষণ করছে। এই তথ্যগুলো উন্মোচিত হলে বাজারে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে এবং অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পথ সুগম হবে।

এসএইচ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে