ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

৬ দিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য গবেষণায় আবারও উঠে এল সত্যতা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৯ ১৫:৪০:১৪
৬ দিনে মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য গবেষণায় আবারও উঠে এল সত্যতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র কোরআনে একাধিক সূরায় একাধিক আয়াতে মহাবিশ্ব সৃষ্টির সময়কাল বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা ফুরকানের ৫৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, "তোমাদের রব হচ্ছেন সেই আল্লাহ যিনি আসমানসমূহ ও জমিন ছয় দিনে সৃষ্টি করেন অতঃপর তিনি আরশের ওপর সমাসীন হন। তিনি পরম করুণাময়। সুতরাং, এ বিষয়ে তোমরা তাকেই জিজ্ঞেস করো যে সম্যক অবগত।" [সূরা ফুরকান, ২৫: ৫৯]

এছাড়াও সূরা আরাফ, সূরা হাদিদ এবং সূরা হুদ-এও একই কথা বর্ণনা করা হয়েছে যে, সাত আসমান, সাত জমিন এবং এ দু'য়ের মাঝখানে যা কিছু আছে, সবকিছু আল্লাহ তায়ালা ছয় সময়কালে সৃষ্টি করেছেন। তবে সবকিছু তিনি একসাথে সৃষ্টি করেননি, বরং ধাপে ধাপে সৃষ্টি করেছেন।

সহীহ মুসলিমের একটি হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

শনিবার দিন: মাটি সৃষ্টি

রবিবার: পর্বত সৃষ্টি

সোমবার: গাছপালা সৃষ্টি

মঙ্গলবার: বিপদাপদ সৃষ্টি

বুধবার: নূর (আলো) সৃষ্টি

বৃহস্পতিবার: পৃথিবীতে পশুপাখি ছড়িয়ে দেন

জুমুআর দিনে (আসরের থেকে রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যবর্তী সময়): সর্বশেষ মাখলুক আদমকে সৃষ্টি।এই বর্ণনা অনুযায়ী, মানুষকে মহাবিশ্ব সৃষ্টির আড়াই লক্ষ বছর পর সৃষ্টি করা হয়েছে (প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করতে ৫০ হাজার বছর লেগেছে)।

কোরআনে মহাবিশ্ব সৃষ্টির যে সময়কাল উল্লেখ করা হয়েছে তা বোঝাতে "আইয়াম" (أيام) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি "ইয়াওমুন" (يوم) শব্দের বহুবচন, যার অর্থ হলো দিন বা দিবস। তবে আরবিতে যখন "আইয়াম" শব্দটি ব্যবহার করা হয়, তখন এটি দ্বারা যেমন রাত-দিনের সমন্বয়ে গঠিত নির্দিষ্ট দিন বোঝানো হয়, তেমনি সময়কাল বা সময়ের ব্যাপ্তিও বোঝানো হয় (age, period, moment, term)।

সূরা হজ, ২২: ৪৭ আয়াতে বলা হয়েছে, "আপনার পালনকর্তার কাছে একদিন তোমাদের গণনার এক হাজার বছরের সমান।"সূরা মা'আরিজ, ৭০: ৪ আয়াতে বলা হয়েছে, "ফেরেশতাগণ এবং রূহ এমন একদিনে (আল্লাহর) দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।"

সম্ভবত এখানে পৃথিবীর সময়ের সাথে ওয়ার্ম হোলের সময়ের তুলনা করা হয়েছে। কারণ, ফেরেশতারা হয়তো মহাবিশ্বে বিচরণের জন্য ওয়ার্ম হোল ব্যবহার করে। ওয়ার্ম হোল ব্যবহার করে আল্লাহর দিকে ঊর্ধ্বগামী হওয়া বা আল্লাহর আরশ পর্যন্ত যাতায়াত করে। কোরআন বলছে, আল্লাহর আরশ হলো পুরো মহাবিশ্ব থেকে প্রশস্ত। অতএব, আল্লাহর আরশের ভর যেহেতু পৃথিবী ও মহাবিশ্বের চেয়ে অনেক অনেক বেশি, তাই সেখানে সময় অত্যধিক ধীরে অতিক্রম করে। তাই আল্লাহর আরশের দিকে ঊর্ধ্বগামী হওয়ার সময় সম্পর্কে বলা হয়েছে- সেখানকার ১ দিন পৃথিবীর গণনার হিসাবে ৫০ হাজার বছরের সমান। অর্থাৎ "আপেক্ষিক দিন" উদ্দেশ্য।

আল্লাহ তায়ালা সবকিছুকে "কুন" (হয়ে যাও) বললেই সৃষ্টি করতে পারেন। তবুও তিনি প্রতিটি জিনিসকে পৃথক পৃথকভাবে পর্যায়ক্রমে বানিয়েছেন। মানুষ সৃষ্টির আগে জমিন সৃষ্টি করা হয়েছে, অর্থাৎ মানুষের বসবাসের জায়গা তৈরি করা হয়েছে। বসবাসের জায়গাটিকে স্থির রাখার জন্য পাহাড়-পর্বত তৈরি করা হয়েছে। বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ সৃষ্টি করা হয়েছে। পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্য সৃষ্টি করা হয়েছে। চলাচলের জন্য, দিক নির্ণয়ের জন্য, সময় নির্ধারণের জন্য এবং পুষ্টির প্রধান উৎস হিসেবে চাঁদ ও সূর্য দ্বারা আসমানকে সুশোভিত করা হয়েছে।

এগুলো সবই মানুষের বসবাসের জন্য অপরিহার্য। যদি মানুষকে এগুলো তৈরি করা ব্যতীত সৃষ্টি করা হতো, তাহলে সেটা হতো অত্যন্ত অযৌক্তিক কাজ। কারণ, বসবাসের স্থান, নিরাপত্তা, খাদ্যদ্রব্য এবং শক্তির উৎস ব্যতীত মানুষের পক্ষে জীবন ধারণ করা সম্ভব নয়। সুতরাং, এটাই হলো সেই কুদরতি ইলাহী, যার কারণে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এত পরে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। সুবহানাল্লাহ, কতই না উত্তম আল্লাহর পরিকল্পনা, কতই না উত্তম আল্লাহর ব্যবস্থাপনা!

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে পর্যায়ক্রমে মহাবিশ্ব ও মানুষ সৃষ্টি এবং বিশ্বব্যবস্থা পরিচালনার ধারাবাহিকতা থেকে শিক্ষা অর্জনের তৌফিক দান করুন। চিন্তা-ভাবনা, ধীর-স্থিরতা ও ধারাবাহিকতা সহকারে কাজ করার তৌফিক দান করুন। আখিরাত ও আল্লাহর পুনরায় সৃষ্টি-সক্ষমতার ওপর ঈমান আনার তৌফিক দান করুন। আমীন।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে