ঢাকা, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

শিবির নির্যাতনের জাবির ইতিহাসের গোপন কাহিনী প্রকাশ্যে

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৪ ১৯:০৮:২২
শিবির নির্যাতনের জাবির ইতিহাসের গোপন কাহিনী প্রকাশ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯৭৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রশিবিরের ওপর চলমান নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছে একজন শিক্ষার্থী আলী জাকি শাহরিয়ার। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে সেই সময়ে ছাত্রশিবিরের কর্মীদের ওপর সংঘটিত নির্যাতনের ১৭টি বিশেষ ঘটনা বা ফেরিস্তি তুলে ধরেছেন। উল্লেখ করেছেন, কঠিন পরিস্থিতিতে যেখানে নামাজ পড়ার জন্য আলাদা জায়গা নেই, সেখানে ওয়াশরুমে নামাজ পড়া শারীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েজ।

১৯৭৮ সাল থেকে শুরু করে প্রায় দুই দশক ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সদস্যরা ছাত্রদলসহ বামপন্থী সন্ত্রাসীদের নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শিবির কর্মীদের ওপর ধারাবাহিক হামলা, মারধর, অপহরণ, গুম, হত্যাকাণ্ড এবং নানা ধরনের অত্যাচার চালানো হয়েছে। ১৭টি নির্দিষ্ট ঘটনার মাধ্যমে এই নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।

১. ১৯৭৮ থেকে ১৯৮১:

প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্রশিবিরকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন ধরণের হয়রানি শুরু হয়। ১৯৮১ সালে মিলাদুন্নবীর আলোচনাসভায় ছাত্রদল ও বামপন্থী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এতে নামাজ পড়া ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও বাধা পড়ে।

২. ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯:

ছাত্রশিবির কর্মীদের ওপর গায়ে হাত তোলার ঘটনা বাড়তে থাকে। ১৫ আগস্ট ১৯৮৯ সালের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ও ছাত্রদলের হামলায় শিবির কর্মীরা আক্রান্ত হন।

৩. ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪:

এই সময়ে নির্যাতনের মাত্রা তীব্র হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যায্য ব্যবস্থা না নেওয়ায় ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পায়। ১৯৯৪ সালে কামরুল ইসলাম নামাজ পড়ার সময় ছাত্রদলের হাতে নৃশংস নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা একই থাকে।

৪. ১৯৯৫:

ছাত্রদলের ‘শিবির শুদ্ধি অভিযান’ নামে এক পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়। এই অভিযানে ছাত্রশিবিরের কর্মীদের ওপর অপহরণ, নির্যাতন, কক্ষ ভাঙচুর, আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা, এবং ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে। এর ফলে শিবিরের কর্মীরা সন্ত্রাস ও সহিংসতার শিকার হন।

৫. ১৯৯৬ থেকে ২০০০:

এই সময় ছাত্রদল প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সহায়তায় ছাত্রশিবির কর্মীদের ওপর আরও বেশি অত্যাচার চালায়। নামাজ পড়া, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করাসহ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করাকে শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এসময় গুম, হত্যারও চেষ্টা হয়।

আলী জাকি শাহরিয়ার উল্লেখ করেছেন, কঠিন পরিস্থিতিতে যেমন শিবিরের ওপর নির্যাতন ও হামলা চলতে থাকে, তখন নামাজ পড়ার জন্য আলাদা নিরাপদ স্থান খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়। তাই ওয়াশরুম বা অন্য কোনো অপ্রচলিত জায়গায় নামাজ পড়া শারীয়ত মোতাবেক জায়েজ, বিশেষ করে যখন ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা পালন করাটাই জরুরি হয়।

একাধিক ঘটনার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। স্থানীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ ও রাজনৈতিক চাপের কারণে ন্যায়বিচার হয়নি। অনেক নির্যাতিত শিবির কর্মী বিচার পাওয়ার জন্য আজও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

নির্যাতনের প্রভাব:

শিক্ষাবিদ ও সচেতন মহলের মধ্যে শিবির নির্যাতনের ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনা

শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিষয়ে অস্থিরতা

ক্যাম্পাসের শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি

নির্যাতিতদের মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি

উদ্ধৃত অংশ:"কঠিন পরিস্থিতিতে ওয়াশরুমে নামাজ পড়া শারীয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ, কারণ নামাজ আদায়ের কোনো বিকল্প নেই। আমরা সবাই জানি, শিবির কর্মীরা যে পরিবেশে ছিল, সেখানে নিরাপদ জায়গা ছিল না।" — আলী জাকি শাহরিয়ার

১৯৭৮ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ছাত্রশিবির কর্মীদের ওপর যে নির্যাতনের ইতিহাস রচিত হয়েছে তা একটি দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক অধ্যায়। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ছাত্ররাজনীতিকে আরও মানবিক ও সম্মানজনক করতে হবে, যাতে কারো ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের ওপর নির্যাতন না হয়।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে