ঢাকা, শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫
Sharenews24

আব্দুল হামিদের আসনে বড় চমক আসছে

২০২৫ আগস্ট ০৯ ১১:১১:১৩
আব্দুল হামিদের আসনে বড় চমক আসছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হাওর জনপদ—অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৪ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ একাধিকবার এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। পরে তার ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনেও বিজয়ী হন, যদিও এসব নির্বাচনকে বিএনপি ও আন্তর্জাতিক মহল ‘প্রহসনমূলক’ বলে অভিযোগ করেছিল।

৫ আগস্ট ২০২৫ সালে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকেই এখন আত্মগোপনে, কেউবা পলাতক। অন্যদিকে, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দমন-পীড়নের শিকার বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা এখন তুলনামূলক মুক্ত পরিবেশে মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জনে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:

ফজলুর রহমান – বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আবদুর রহিম মোল্লা – অবসরপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা।

সুরঞ্জন ঘোষ – হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ট্রাস্টের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক ছাত্রনেতা।

ডা. ফেরদৌস আহমেদ লাকী – ড্যাব নেতা।

আমিনুল ইসলাম রতন – জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

জহির উদ্দিন ভূঁইয়া – সাবেক উপসচিব।

হাফিজুল্লাহ হিরা – কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি।

প্রকৌশলী নেছার উদ্দিন – বুয়েট ছাত্রদলের সাবেক নেতা।

সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান বাবু – অষ্টগ্রাম সদর ইউপি’র তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

জাহিদুল আলম জাহাঙ্গীর – মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি।

তবে এত মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় স্থানীয় বিএনপি কর্মীদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। দলীয় প্রার্থী নির্ধারণের আগেই একে অপরের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণায় লিপ্ত থাকায় মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীরা হতাশ। এতে নির্বাচনের আগে অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে বিএনপি বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রয়েছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। দলটি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট শেখ রোকন রেজাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সৎ ও দক্ষ জনবল তৈরি করেছি। এবার মানুষ পরিবর্তন চায়। জামায়াত সে পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।”

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন অ্যাডভোকেট বিল্লাল আহমেদ মজুমদার ও হাফেজ মাওলানা মুহাম্মাদ আহসানুল্লাহ।খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন জেলা অর্থ সম্পাদক মাওলানা অলিউর রহমান।

আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সমাজকর্মী ডা. শাহীন রেজা চৌধুরী ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন। তিনি বলেন, “আলোকিত হাওর গড়তে চাই। আমি কোনো দলীয় বাধ্যবাধকতা ছাড়াই সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিজয়ী হব।”

কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে হিন্দু ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার। ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটও এবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত, প্রার্থী সুরঞ্জন ঘোষ মনে করেন—এই জনগোষ্ঠীর সমর্থন পেলে তিনি বিজয়ী হতে পারেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ-৪ এখন বহুমাত্রিক প্রতিযোগিতার মঞ্চে পরিণত হয়েছে। বিএনপি, জামায়াত, ইসলামি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনী লড়াই দিন দিন জমে উঠছে। তবে দলীয় ঐক্য ও ভোটারদের আস্থা কার পক্ষে থাকবে, তা নির্ধারিত হবে মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম ও কৌশলের ওপর।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে