ঢাকা, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে হাহাকার, সূচক ১১ বছর আগের জায়গায়

২০২৫ মে ২৭ ১৫:৩৭:১৮
শেয়ারবাজারে হাহাকার, সূচক ১১ বছর আগের জায়গায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে আবারও বড় ধরনের ধস দেখা দিয়েছে। সোমবার (২৭ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭০ পয়েন্টেরও বেশি পড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৬৭৮ পয়েন্টে। এটি গত ১১ বছর ৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থান। উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি এই সূচক ছিল ৪ হাজার ৬৭৫ পয়েন্ট। এই পতনে বাজার নেমে গেছে এক দশকের বেশি সময় আগের অবস্থানে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

টানা দরপতনের প্রেক্ষাপটে অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারী এখন মূলধন হারিয়ে বিপর্যস্ত। কেউ কেউ দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করে অপেক্ষায় থাকলেও, লাভ তো দূরে থাক—মূল টাকাই তুলে নেওয়ার অবস্থা নেই।

মোহাম্মদপুরের এক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বলেন, “আমার ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ এখন পৌনে দুই লাখ টাকায় নেমেছে। এটা কোনো স্বাভাবিক বাজার নয়। মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছা করে বাজার ধসিয়ে দিচ্ছে।”

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা, আস্থা ও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার ঘাটতি স্পষ্ট। অনেক কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন ইতিবাচক হলেও শেয়ারদরে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এতে তারা কৃত্রিম চাপ ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ লক্ষ্য করছেন। তাঁদের মতে, বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরে সুচিন্তিত নীতিমালার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত আরও কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নিজেই আস্থাহীনতার মুখোমুখি। কমিশনের ভেতরে এখন পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। শুধু অভ্যন্তরীণ অস্থিরতাই নয়, শেয়ারবাজারের প্রধান অংশীজনদের সঙ্গেও কমিশনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকার, অ্যাসোসিয়েশন ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কমিশনের দূরত্ব বাড়ছে, যার ফলে বাজার নিয়ে নেওয়া অনেক সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না বা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বাজারে অস্থিরতা চললেও বাস্তবসম্মত নীতিগত পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হলেও, তার বাস্তব প্রতিফলন নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের যথাযথ ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না। আবার ডিভিডেন্ড দিলেও তার প্রভাব শেয়ারের দরে দেখা যাচ্ছে না। ইনসাইডার ট্রেডিং ও অস্বচ্ছ আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাজারে আস্থা তলানিতে নেমেছে।

তাঁদের মতে, বাজারকে স্থিতিশীল ও বিনিয়োগবান্ধব করতে হলে দ্রুত সময়োপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কঠোর নজরদারি, বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ ও সংলাপভিত্তিক যোগাযোগ নিশ্চিত করা জরুরি।

বাজার পর্যালোচনা

আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪১.২৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৭৮ পয়েন্টে। যা গত বৃহস্পতিবার ১৬ পয়েন্ট, শনিবার ৩৮ পয়েন্ট, সোমবার ১৭ পয়েন্ট ও রোববার ১০ পয়েন্ট কমেছিল।

আজ ডিএসইতে ২৭২ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৮২ কোটি ৬২ লাখ টাকার। সেই হিসাবে লেনদেন কমেছে ৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বা ৩ শতাংশ।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৮৩টির বা ২১.১৭ শতাংশের, কমেছে ২৩৭টির বা ৬০.৪৬ শতাংশের এবং দর পরিবর্তন হয়নি ৩৬টির বা ১৮.৩৭ শতাংশের।

অপর শেয়ারবাজার সিএসইতে আজ ১০ কোটি ১২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগেরদিন লেনদেন হয়েছিল ১১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার।

এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২০৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৬১টির, কমেছে ১১৫টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৩১টির।

এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে।আগের দিন সিএএসপিআই কমেছিল ৪৩ পয়েন্ট।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে