ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
Sharenews24

‘প্রকৃতির ডাকে’ ট্রেন চালক বিপাকে

২০২৫ মে ২২ ১৬:২১:৫৮
‘প্রকৃতির ডাকে’ ট্রেন চালক বিপাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ রেলওয়ের এক অদ্ভুত অথচ বাস্তব সংকট উঠে এসেছে সম্প্রতি এক ঘটনায়। ২২ বছরের অভিজ্ঞ ট্রেনচালক মো. আবদুর রহমান ১৭ মে পারাবত এক্সপ্রেস চালানোর সময় জরুরি প্রয়োজনে—প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে—স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে টয়লেট ব্যবহার করেন। কিন্তু এতেই তাঁর বিরুদ্ধে এবং সঙ্গে থাকা সহকারী চালক মো. কাওছার আহম্মেদের বিরুদ্ধে কন্ট্রোল অর্ডার (তলব নোটিশ) জারি করে কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

চালক আবদুর রহমান জানান, ইঞ্জিনে কোনো টয়লেট না থাকায় তিনি গার্ডের রুমে যেতে চাইলেও তালা দেখে বাধ্য হয়ে স্টেশনমাস্টারের অফিসে যান। এই পুরো প্রক্রিয়ায় মাত্র ছয় মিনিট সময় লেগেছে, তবে এর মধ্যেই ট্রেন ছাড়ার সিগন্যাল বাতিল করে পরের ট্রেনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, এতে বিলম্ব হয় মোট ২১ মিনিট। এই সময় ডিটেনশন বইয়ে ‘প্রকৃতির ডাক’ বলে উল্লেখ করা হয়।

এ ঘটনার পর চালকদের পেশাগত দুর্ভোগ ও মানবিক অধিকার নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ট্রেনচালকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ডিউটির আগে তাঁরা পানি কম পান, খাবার খাওয়া নিয়েও চিন্তায় থাকেন, শুধু এই ভয়েই—যদি পথে টয়লেট লাগে! ট্রেনচালকদের মতে, ৯৯ শতাংশ চালকই ইউরিন ইনফেকশনসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভোগেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমান ইঞ্জিনগুলোতে টয়লেটের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যদিও ৩০টি ৩০০০ সিরিজ ইঞ্জিনে টয়লেটের জায়গা রাখা হয়েছিল, বাস্তবে সেগুলোও চালু হয়নি। বরং সেখানে কেবল একটি সুইচ দেখা যায়, যার নিচে লেখা ‘Toilet’। অথচ বিদেশ সফর করে এসব ইঞ্জিন কেনা হয়, কিন্তু চালকদের মতামত নেওয়া হয় না।

এ ঘটনার পর রেল কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে তলব আদেশ বাতিল করলেও চালক ও সহকারী চালকসহ ১৫ জন লোকোমাস্টার বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. মহিউদ্দিন আরিফের সঙ্গে দেখা করে ইঞ্জিনে টয়লেট না থাকার বিষয়টি গুরুত্বসহ আলোচনা করেন। মজিবুর রহমান, রানিং স্টাফ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান—চালকদের এমন শারীরিক সমস্যা সরাসরি ট্রেন চলাচলের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত।

দেশের প্রথম নারী ট্রেনচালক ছালমা খাতুন বলেন, নারীদের তো এই সমস্যায় আরও বেশি দুর্ভোগ হয়। এ কারণে নারী চালকদের দূরপাল্লার ট্রেনে পাঠানো হয় না।

সমালোচকরা বলছেন, কোনো ধরনের সম্মান বা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি না রেখে শুধু শৃঙ্খলা রক্ষার দোহাই দিয়ে চালকদের তলব করা হয়েছে। একজন মানুষ কি নিজ শরীরের চাহিদা সামাল না দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে পারেন? এই প্রশ্ন এখন সামাজিক মাধ্যমে গরম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

অবিলম্বে ট্রেন ইঞ্জিনে টয়লেট ও এসির মতো প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ ও সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা।

মুয়াজ/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে