ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে স্বল্পমেয়াদী উদ্যোগই হতে পারে ঘুরে দাঁড়ানোর মূলভিত্তি

২০২৫ মে ১৩ ১৫:৫৩:৫১
শেয়ারবাজারে স্বল্পমেয়াদী উদ্যোগই হতে পারে ঘুরে দাঁড়ানোর মূলভিত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার দীর্ঘদিন ধরেই নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তারল্য সংকট, বিনিয়োগকারী আস্থার ঘাটতি ও নেগেটিভ ইক্যুইটির মতো সমস্যা বাজারকে নাজুক অবস্থায় ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত রোববার শেয়ারবাজার উন্নয়নে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি শেয়ারবাজার সংস্কার কমিটিও দীর্ঘমেয়াদি ও মধ্যমেয়াদি বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া পাঁচ দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে—সরকারি মালিকানাধীন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ, সম্ভাবনাময় বড় দেশীয় কোম্পানিগুলোকে কর-প্রণোদনা দিয়ে বাজারমুখী করা, বিদেশি বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে তিন মাসে কার্যকর সংস্কার সম্পন্ন করা, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং বড় কোম্পানিগুলোকে ব্যাংক ঋণের বদলে শেয়ারবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহে উৎসাহিত করা।

সংস্কার কমিটির সুপারিশেও এসব বিষয়ের প্রতিফলন রয়েছে। বিশেষত কর কাঠামো সহজীকরণ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে নীতিগত সহায়তা এবং আইপিও প্রক্রিয়া দ্রুত ও স্বচ্ছ করার বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে।

তবে এসবই শেয়ারবাজারের জন্য মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। বাজার বিশ্লেষক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলছেন, শুধুমাত্র মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই চলবে না, বাজারে তাৎক্ষণিক উত্তরণে স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগ এখন বেশি প্রয়োজন।

ঢাকার একটি ব্রোকার হাউসে দেখা গেল, কয়েকজন খুচরা বিনিয়োগকারী ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে বলছেন, “আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত। আমাদের প্রয়োজন এখনই বাজারে ইতিবাচক সাড়া।”

স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ কী হতে পারে?

বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে বাজার পুনরুদ্ধারে যেসব বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো:

* সরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় করা;

* বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল (Market Stabilization Fund) বৃদ্ধি করা;

* ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ সীমা বাস্তবায়নে নমনীয়তার উদ্যোগ নেওয়া;

* নেগেটিভ ইক্যুইটি সমস্যা সমাধান২০১০ সালের পর যেসব বিনিয়োগকারী মার্জিন লোনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা;

* বাই-ব্যাক আইন দ্রুত কার্যকর করা।

এক সাধারণ বিনিয়োগকারী বলেন, “আমরা চাই বাজারে শৃঙ্খলা থাকুক। যেন প্রতিদিন পুঁজি হারানোর আতঙ্কে থাকতে না হয়।” একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা যোগ করলেন, “যত পরিকল্পনাই হোক, যদি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে বাজারে আস্থা ফিরবে না।”

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাজার সংশ্লিষ্টদের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখার পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি বাস্তব পদক্ষেপ—যেমন তারল্য সহায়তা, বিনিয়োগকারীদের রিলিফ প্যাকেজ এবং বিশ্বাসযোগ্য কোম্পানির দ্রুত তালিকাভুক্তি—নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই।

এই মুহূর্তে যদি আস্থা ফেরানো যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহ নিয়ে আবার বাজারমুখী হবেন। নাহলে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি স্বপ্নও ধুলোয় গড়াবে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে