ঢাকা, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
Sharenews24

নিলামে কমলো দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের সুদ

২০২৫ মে ০৪ ০৮:১৫:০৭
নিলামে কমলো দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের সুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও, সর্বশেষ নিলামে ২০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নিলামে ২০ বছরের বন্ডের সুদের হার ৮ বেসিস পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২.৪৬ শতাংশ। এর আগের নিলামে এই বন্ডের সুদের হার ছিল ১২.৫৪ শতাংশ।

অন্যদিকে, একই দিনে অনুষ্ঠিত ১৫ বছরের মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার পূর্বের তুলনায় বেড়েছে। এই বন্ডের সুদহার ১২ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৪০ শতাংশ, যেখানে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত নিলামে এটি ছিল ১২.২৮ শতাংশ।

নিয়ম অনুযায়ী, একসঙ্গে আয়োজিত দুটি বন্ড নিলামে সাধারণত সুদের হারে ঘনিষ্ঠতা দেখা যায়। কিন্তু এবারের ১৫ ও ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের নিলামে সুদের হারে এই বিপরীতমুখী গতি বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি খুব স্বাভাবিক নয় এবং এর পেছনে রয়েছে নন-কম্পেটিটিভ বিডের আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অতিরিক্ত বন্ড বরাদ্দ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১৬ সালের নির্দেশনা অনুযায়ী, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের নিলামে মোট প্রস্তাবিত পরিমাণের ৩০ শতাংশ নন-কম্পেটিটিভ শ্রেণিতে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারী, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ফান্ড এবং কল্যাণ তহবিলের জন্য সংরক্ষিত থাকে। বাকি ৭০ শতাংশ প্রতিযোগিতামূলক বিডিংয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

তবে এবারের ২০ বছরের বন্ডের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নন-কম্পেটিটিভ শ্রেণিতে ৫০ শতাংশেরও বেশি বন্ড বরাদ্দ করেছে। এর ফলে প্রতিযোগিতামূলক বিডে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বন্ডের প্রাপ্যতা কমে যায় এবং তারা নির্ধারিত পরিমাণের তুলনায় কম ঋণ দিতে সক্ষম হয়। ফলস্বরূপ, বাজার থেকে চাহিদানুযায়ী তহবিল সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি এবং সুদের হার কমে এসেছে।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান বলেন, "সাধারণভাবে, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে যত বেশি পরিমাণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নেওয়া হয়, সুদের হার তত বেশি হয়। এবারে প্রাইমারি ডিলারদের কাছ থেকে তুলনামূলকভাবে কম ঋণ নেওয়া হয়েছে, যার ফলেই সুদের হার কমেছে।"

তিনি আরও জানান, নীতিমালায় উল্লেখ থাকলেও, এবারের অতিরিক্ত নন-কম্পেটিটিভ বরাদ্দের বিষয়ে প্রাইমারি ডিলারদের কাছে কোনো সার্কুলার বা আনুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়নি। এতে করে নিলামে অংশগ্রহণকারী ব্যাংকগুলো প্রস্তুত থাকতে পারেনি এবং বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

সরকারি সিকিউরিটিজ বা বন্ডের সুদের হার দেশের আর্থিক নীতিমালার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। এটি কেবল সরকারি ঋণগ্রহণের খরচ নির্ধারণ করে না, বরং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ কার্যক্রম, বিনিয়োগ নীতি ও সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরও প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের সুদের হারে এমন পরিবর্তন ভবিষ্যতের আর্থিক পরিকল্পনায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

মুয়াজ/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে