ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

দেশের ভেতরে নেতৃত্বের খোঁজে আওয়ামী লীগ

২০২৫ এপ্রিল ২৪ ১২:৩০:১৩
দেশের ভেতরে নেতৃত্বের খোঁজে আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ৭৬ বছরের পুরোনো দল আওয়ামী লীগ আজ ইতিহাসের এক গভীর সংকটে। দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতৃত্বদানকারী দলটি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা হারানোর পর এখন নিজস্ব নেতৃত্বহীনতার চাপে। দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখন দেশের বাইরে, আর দেশের ভেতরে থেকে সংগঠিত হওয়ার জন্য দলটি এখন মরিয়া হয়ে নেতৃত্ব খুঁজছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনের পতনের পর অনেক শীর্ষ নেতা, এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশত্যাগ করেন। অধিকাংশই আশ্রয় নেন ভারত, ইউরোপ ও আমেরিকায়। ফলে দেশের অভ্যন্তরে দলটি হয়ে পড়ে নেতৃত্বশূন্য।

দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা পড়েন চরম বিভ্রান্তিতে। কোনো দিকনির্দেশনা ছাড়া অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান, কেউ কেউ গ্রেপ্তার হন, আবার কেউ কেউ দেশে থেকেই পালিয়ে বেড়াতে থাকেন।

বিদেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতারা এখন মনে করছেন, দেশে থেকে প্রকাশ্যে থেকে সংগঠনের হাল ধরার জন্য প্রয়োজন এমন একজন নেতার, যিনি সাহসের সঙ্গে এগিয়ে আসবেন। আলোচনায় আছে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম। কিন্তু মামলা, গ্রেপ্তার এবং অনিশ্চয়তার ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে আসছেন না।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নাম ঘোষণা করতে চাইছে না, কারণ তাতে সেই ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় দমননীতির মুখে পড়তে পারেন।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের তৎপরতা মূলত দিবসভিত্তিক ঝটিকা মিছিল এবং সামাজিক মাধ্যমে সীমাবদ্ধ। বিদেশে থেকে দল পরিচালনার কারণে মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বাস্তব যোগাযোগ ও নেতৃত্বের অভাব দেখা দিয়েছে।

তবে তৃণমূলের নেতাদের দাবি, তারা এখন অনেকটাই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগে রয়েছেন এবং সামাজিক মাধ্যমে বেশ সক্রিয়।

যদিও দেশের ভেতরে একজন নতুন নেতা খোঁজার চেষ্টা চলছে, তবে দল এখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একমাত্র নেতা হিসেবেই দেখছে। একাধিক নেতার ভাষ্য, শেখ হাসিনার নির্দেশনাতেই যে কোনো দেশীয় নেতৃত্ব কাজ করবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আমরা ঘুরে দাঁড়াব। বিকল্প নেতৃত্বের কোনো প্রশ্নই আসে না।”

নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত নতুন ছাত্র নেতৃত্বের দল এনসিপিসহ অনেক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে।

আওয়ামী লীগের নেতারা এখনো সিদ্ধান্তহীন। কেউ কেউ মনে করছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিকভাবে আত্মঘাতী হতে পারে। তবে তারা এটিও ভাবছেন যে, আন্তর্জাতিক চাপের ফলে নির্বাচন একটি রাজনৈতিক পুনঃসংগ্রহের সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।

আওয়ামী লীগের অতীত মিত্র ১৪ দল, জাতীয় পার্টি, এমনকি অন্যান্য প্রগতিশীল দলগুলোর অনেক নেতাই বর্তমানে জেলে বা আত্মগোপনে। ফলে দলটি এখন রাজনৈতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েছে।

সাবেক জোটসঙ্গীরা এখন নিজস্ব অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই ব্যস্ত। বিরোধী দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনকালে হওয়া নির্যাতনের জন্য ক্ষোভ রয়েছে, যা দলটির ভবিষ্যৎ অবস্থানকে আরও দুর্বল করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ মনে করেন, “দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে দলটি রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। দলভিত্তিক সুবিধাবাদী ও দুর্নীতির চর্চা এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছিল যে, গণমানুষের আস্থা হারিয়েছে।”

তার মতে, “বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের জন্য রাজনীতিতে সহসাই শক্ত অবস্থান তৈরি করা কঠিন হবে।”

আওয়ামী লীগ এখন একদিকে যেমন নেতৃত্ব সংকটে, অন্যদিকে রাজনৈতিক নিঃসঙ্গতায়। বিদেশে থাকা নেতাদের মাধ্যমে মাঠের রাজনীতি চালানো যাচ্ছে না, আবার ভেতরে থেকে কেউ সাহস করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন না।

অন্তর্বর্তী সরকার, নতুন রাজনৈতিক শক্তি এবং বিরোধী দলগুলোর চাপে পড়ে দলটি এখন নিজের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

তাদের পক্ষে কী সত্যিই সম্ভব হবে ঘুরে দাঁড়ানো? নাকি সময়ই বলবে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অধ্যায় শেষের দিকে?

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে