ঢাকা, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

আর্থিক খাতে দৈন্যদশা

১৪ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে চরম বেকায়দায় বিনিয়োগকারীরা

২০২৫ এপ্রিল ২৩ ২০:২৩:৫৪
১৪ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে চরম বেকায়দায় বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে আর্থিক খাতের ১৪টি কোম্পানির শেয়ারদর পতনে বিনিয়োগকারীরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। সম্প্রতি এই খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর ফেসভ্যালুর কাছাকাছি বা তার নিচে নেমে এসেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর হতাশা সৃষ্টি করেছে।​

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসনের অভাব, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ হ্রাস এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাজারে কারসাজি চললেও তা দমন করা যাচ্ছে না, ফলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বারবার ক্ষতির মুখে পড়ছেন।​

এই অবস্থায় বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানো এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উঠেছে। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে এবং তারা তাদের পুঁজি রক্ষা করতে সক্ষম হবেন।

শেয়ার কিনে বেকায়দা থাকা কোম্পানিগুলো হলো- বে-লিজিং, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ফাস ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, মাইডাস ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।

কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রাইম ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ছাড়া অন্যগুলো পুঁঞ্জিভুত লোকসানে রয়েছে।

বে-লিজিং

‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি বে-লিজিং ২০০৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ৬৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন ১৪০ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২০ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৬ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এই কোম্পানির ১৪ কোটি ৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪৩টি শেয়ারের মধ্যে ৫৪.০৫ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

বিআইএফসি

২০০৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ১ হাজার ১৭৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন ১০০ কোটি ৬৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৩ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার সাড়ে ৭ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এ কোম্পানির ১০ কোটি ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪৪টি শেয়ারের মধ্যে ১৮.৮৮ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

ফারইস্ট ফাইন্যান্স

২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি ফারইস্ট ফাইন্যান্সের পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ৯০৮ কোটি ২ লাখ টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন ১৬৪ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৬ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৩ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। এ কোম্পানির ১৬ কোটি ৪০ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩০টি শেয়ারের মধ্যে ৪৭.০৭ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

ফাস ফাইন্যান্স

২০০৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি ফাস ফাইন্যান্সের পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ১ হাজার ৭২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন ১৪৯ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৩ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। এ কোম্পানির ১৪ কোটি ৯০ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি শেয়ারের মধ্যে ৭৮.৪১ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

ফার্স্ট ফাইন্যান্স

২০০৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি ফার্স্ট ফাইন্যান্সের পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ৪৯৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন ১১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৯ সালে ২ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৩ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। এ কোম্পানির ১১ কোটি ৮৫ লাখ ৪৪ হাজার ৬৬৩টি শেয়ারের মধ্যে ৩৮.১২ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

ইন্টারন্যাশনার লিজিং

২০০৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি ইন্টারন্যাশনার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ৪ হাজার ৬৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন ২২১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার সাড়ে ৩ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। এ কোম্পানির ২২ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার ২৪৬টি শেয়ারের মধ্যে ৩৫.৬৩ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

মাইডাস ফাইন্যান্স

২০০২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি মাইডাস ফাইন্যান্সের বর্তমানে পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ৪৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রম- ২০০ কোটি টাকা ও ১৪৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২২ সালে ১.৫০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার সাড়ে ৮ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। এ কোম্পানির ১৪ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৫০৭টি শেয়ারের মধ্যে ৩৪.৯৪ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

ফিনিক্স ফাইন্যান্স

২০০৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি ফিনিক্স ফাইন্যান্সের পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ৭২৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন ১৬৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৯ সালে ৬ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার সাড়ে ৩ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। এ কোম্পানির ১৬ কোটি ৫৮ লাখ ৭৪ হাজার ১৯৫টি শেয়ারের মধ্যে ৫৪.৭১ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

পিপলস লিজিং

২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি পিপলস লিজিংয়ের পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন যথাক্রম- ৫০০ কোটি টাকা ও ২৮৫ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৪ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।

বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার সাড়ে ২ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। এ কোম্পানির ২৮ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৭টি শেয়ারের মধ্যে ৭৩.৭৬ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

প্রিমিয়ার লিজিং

২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি প্রিমিয়ার লিজিংয়ের পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ৮৪২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন ১৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৭ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার সাড়ে ৩ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। এ কোম্পানির ১৩ কোটি ২৯ লাখ ৭০ হাজার ২১০টি শেয়ারের মধ্যে ৫১.৩৬ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

ইউনিয়ন ক্যাপিটাল

২০০৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি ইউনিয়ন ক্যাপিটালের পুঁঞ্জিভুত লোকসানের পরিমাণ ১ হাজার ৫৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন ১৭২ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৫ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার সাড়ে ৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এ কোম্পানির ১৭ কোটি ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৪৩টি শেয়ারের মধ্যে ৫১.২০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

প্রাইম ফাইন্যান্স

২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি প্রাইম ফাইন্যান্সের পরিশোধিত মূলধন ২৭২ কোটি ৯১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০১৯ সালে ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৪ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। এ কোম্পানির ২৭ কোটি ২৯ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৩টি শেয়ারের মধ্যে ৩৩.৩৮ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

জিএসপি ফাইন্যান্স

২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি জিএসপি ফাইন্যান্সের পরিশোধিত মূলধন ১৫৭ কোটি ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২১ সালে ২.৫০ শতাংশ ক্যাশ ও ৭.৫০ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৫ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। এ কোম্পানির ১৫ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ৫৮৫টি শেয়ারের মধ্যে ৫০.৫৮ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স

২০০৭ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের পরিশোধিত মূলধন ১৯৮ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২২ সালে ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৮ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এ কোম্পানির ১৮ কোটি ৮২ লাখ ৩৬ হাজার ২৬৭টি শেয়ারের মধ্যে ৫২.৯৭ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে