ঢাকা, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

ইসরায়েলের 'শোকবার্তা' বিতর্কে পোপের মৃত্যু নিয়ে নতুন জটিলতা

২০২৫ এপ্রিল ২৩ ১৩:১৬:০৯
ইসরায়েলের 'শোকবার্তা' বিতর্কে পোপের মৃত্যু নিয়ে নতুন জটিলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করে অল্প সময়ের মধ্যেই সেই বার্তা মুছে ফেলে ইসরায়েল সরকার। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ইসরায়েলের সরকারি এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে পোপের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখা হয়, “শান্তিতে বিশ্রাম নিন, পোপ ফ্রান্সিস। তাঁর স্মৃতি হোক আশীর্বাদধন্য।” বার্তাটির সঙ্গে পোপের জেরুজালেম সফরের একটি পুরোনো ছবিও যুক্ত করা হয়েছিল। তবে বার্তাটি পোস্টের কিছুক্ষণের মধ্যেই কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তা সরিয়ে ফেলা হয়। এই আচরণ ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা ও তীব্র বিতর্ক।

ইসরায়েলের এই আচরণকে অনেকেই রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সংবেদনশীলতার নিদর্শন হিসেবে দেখছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত পোপ ফ্রান্সিস ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি 'সংবেদনশীল' বক্তব্য দিয়েছিলেন, যা সরকারের একটি অংশ ভালোভাবে নেয়নি। তাদের দাবি, এই শোকবার্তাটি ‘ভুলবশত’ পোস্ট করা হয়েছিল এবং তা মুছে ফেলা হয়েছে অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে। রয়টার্সের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পোপ ফ্রান্সিস তাঁর papacy-এর সময় জোরালোভাবে মানবাধিকার, শান্তি ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গত বছরের নভেম্বরে তিনি গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে কথা বলেন এবং সেটিকে “সম্ভাব্য গণহত্যা” হিসেবে উল্লেখ করেন। এছাড়া চলতি বছরের শুরুতে গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে তিনি “লজ্জাজনক” বলে অভিহিত করেন। এসব বক্তব্য ইসরায়েলি প্রশাসনের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে পোপের মৃত্যুতে ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ পৃথকভাবে শোকবার্তা প্রকাশ করেছে। তারা পোপ ফ্রান্সিসের আন্তঃধর্মীয় ঐক্য প্রচেষ্টা ও মানবিক মূল্যবোধের ভূয়সী প্রশংসা করে বিবৃতি দিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পোপের মৃত্যু নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং পোপকে “গভীর বিশ্বাস ও সহানুভূতির মানুষ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন এমন একজন ধর্মীয় নেতা, যিনি ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তিনি প্রায় প্রতিদিন গাজার খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখতেন। ২০১৪ সালে পবিত্র ভূমি সফরের সময় তিনি জেরুজালেমের পশ্চিম প্রাচীর ও ইসরায়েল নির্মিত বিভাজনের দেয়ালে প্রার্থনা করেছিলেন, যা তখন প্রশংসিত হলেও বর্তমানে তার অবস্থানকে ইসরায়েল অনেকটাই সন্দেহের চোখে দেখে বলেই বিশ্লেষকদের অভিমত।

এই ঘটনাটি শুধু একটি শোকবার্তা মুছে ফেলার বিষয় নয়, বরং এটি ইসরায়েল-ভ্যাটিকান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জটিল বাস্তবতা ও রাজনৈতিক কূটনীতির একটি সূক্ষ্ম দিককে সামনে এনেছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে