ঢাকা, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

হাসিনার আমলে ‘কবিতা’ লেখার জন্য ট্রেন চালকের ৬ শাস্তি

২০২৫ মার্চ ০৩ ১০:৫৩:২৯
হাসিনার আমলে ‘কবিতা’ লেখার জন্য ট্রেন চালকের ৬ শাস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লোকোমাস্টার (ট্রেন চালক) আবুল কালাম আজাদ ফেসবুকে ‘অসৎ অফিসার’ নামে একটি কবিতা লেখার পর তেল চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে রেল কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্তসহ ছয়টি শাস্তি প্রদান করে।

২০১৯ সালের ৩ আগস্ট, আবুল কালাম আজাদ যশোরের চেঙ্গুটিয়া স্টেশনের কাছে একটি তেলবাহী ট্রেন চালাচ্ছিলেন। অভিযোগ ওঠে যে, ওই সময়ে ইঞ্জিন থেকে সাদা বস্তা সদৃশ কিছু পড়তে দেখা গেছে, যার মাধ্যমে তেল চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এরপরই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তাকে ছয়টি শাস্তি দেওয়া হয়। শাস্তির মধ্যে ছিল তার পদোন্নতি স্থগিত রাখা, ১২১ দিন সাময়িক বরখাস্ত করা, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করা, গ্রেড কমিয়ে দেওয়া এবং তাকে স্থানান্তরিত করা।

শাস্তির পর আবুল কালাম আজাদের জীবনে নানা আর্থিক ও ব্যক্তিগত বিপর্যয় আসে। তার মা চিকিৎসার অভাবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মারা যান। এছাড়া, তার মেয়েকে ভালো বিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য অর্থনৈতিক সংকটের কারণে একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে বাধ্য হন। তবে, আবুল কালাম আজাদ হাল ছাড়েননি। তিনি জানালেন, তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং তিনি এই শাস্তির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।

এক বছর পর, ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দেয়। রায়ে বলা হয়, আবুল কালাম আজাদ তেল চুরি করেননি, বরং তিনি রেলের তেল সঞ্চয় করেছেন। তদন্তে দেখা যায় যে, তিনি ৩০ লিটার তেল সঞ্চয় করেছিলেন এবং অভিযোগে উল্লেখিত বস্তা পড়ে যাওয়ার ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিল না। আদালত তার শাস্তিকে অবৈধ এবং অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করে এবং তার শাস্তি বাতিলের নির্দেশ দেয়।

এছাড়া, আদালত উল্লেখ করেন যে, আবুল কালাম আজাদকে শাস্তি দেওয়ার আগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি, যা আইনগতভাবে বেআইনি। আদালত তার শাস্তির আদেশ বাতিল করে তাকে তার বকেয়া বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে রেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়।

আবুল কালাম আজাদ জানালেন যে, তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে "অসৎ অফিসার" নামে কবিতা লেখার কিছুদিন পরেই ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ আনা হয়। তার দাবি, এটি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্যই করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো কর্মচারী এ ধরনের নিপীড়নের শিকার না হন। তিনি আরও জানান, তিনি একজন কবি এবং তার দুটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ফেসবুকে ‘অসৎ অফিসার’ নামে কবিতা লেখার পর থেকেই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ট্রেনের শেষ বগির গার্ডও দাবি করেন যে, তিনি এমন কোনো ঘটনা দেখেননি, যেখানে তেল চুরি হওয়ার অভিযোগ ছিল।”

তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে লেখা কবিতার কিছু লাইন ছিল:

“অসৎ অফিসার যারা

ঘুষ খায় তারা।

চাকরির নামে খায় যে ঘুষ

মরার পরে হয় যে হুঁশ।

তেলী মাথায় ঢালে তেল

শুকনা মাথায় ভাঙে বেল।

হায়রে অসৎ অফিসার বুঝে না।”

অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল, তা অবশেষে আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়, এবং আদালত তার পক্ষে রায় দেয়।

আরিফ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে