ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫
Sharenews24

সেন্টমার্টিনে মার্কিন নৌঘাঁটি? শঙ্কা ও সত্যের সন্ধানে

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১২ ১২:০৩:০০
সেন্টমার্টিনে মার্কিন নৌঘাঁটি? শঙ্কা ও সত্যের সন্ধানে

নিজস্ব প্রতিবেদক : সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন স্থান। ৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট এই দ্বীপে প্রায় দশ হাজার মানুষ বসবাস করেন, তবে প্রতি বছর লক্ষাধিক পর্যটক দ্বীপটি ভ্রমণ করেন। এই বিপুল জনসমাগমের ফলে দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের উপর চাপ পড়ছে, যা তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এনভায়রনমেন্টাল অ্যাডভান্সেস নামে একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যেখানে পর্যটনের প্রভাবে দ্বীপটির পরিবেশগত সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। নিবন্ধে বলা হয়, দ্বীপটির উষ্ণতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, বন উজাড়, দূষণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, কচ্ছপের আবাসস্থল ধ্বংস, এবং মিঠা পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

এছাড়া, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ওশান সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়, ২০৪৫ সালের মধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপটি প্রবাল শূন্য হয়ে যেতে পারে এবং তার ৪১ ভাগ প্রবাল ইতোমধ্যে ধ্বংস হয়েছে। যদি এভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে দ্বীপটি খুব শীঘ্রই সমুদ্রের তলায় তলিয়ে যেতে পারে।

২০২৪ সালের অক্টোবরে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত দ্বীপে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করা হয়, এবং পর্যটকদের সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে দুই হাজার জনে নামিয়ে আনা হয়। এছাড়াও, পর্যটকদের আগাম নিবন্ধন, ট্রাভেল পাস এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শনসহ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রবেশ রোধ করা যায়।

এছাড়া, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সেন্টমার্টিন ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সময়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যেমন প্লাস্টিক ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার, খাবার পানি উৎপাদন এবং বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা।

তবে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কার মাঝে নানা গুজব ও অপপ্রচারও চলছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি গুজব ছড়ানো হয় যে, মিয়ানমারের আরাকান আর্মি সেন্টমার্টিন দখল করে নিয়েছে। যদিও পরে ফ্যাক্টচেক দল এই তথ্যকে মিথ্যা বলে জানায়। বর্তমানে আরও একটি গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে।

তবে এই অভিযোগগুলো সঠিক নয়, এবং সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপকে কোনো দেশের কাছে ইজারা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।

বিশ্ব রাজনীতির প্রসঙ্গে, সেন্টমার্টিন দ্বীপের ইজারা নিয়ে কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং মিডিয়া অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা দাবি করছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইজারা দেওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ রয়েছে। যদিও এসব দাবি ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর এবং সমুদ্র অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। বর্তমানে, চীনকে ঠেকাতে মার্কিন নৌঘাঁটি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা ভারত মহাসাগরে বা দক্ষিণ চীন সাগরে রয়েছে, যেখানে ইতোমধ্যে মার্কিন নৌবাহিনীর শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে।

এভাবে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়া গুজব এবং অপপ্রচারগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বানানো হলেও, বাস্তবতা হলো এই দ্বীপটি বাংলাদেশের পরিবেশগত সুরক্ষার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরিফ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে