ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

ভারতের সাথে কমছে, পাকিস্তানের সাথে বাড়ছে: বাণিজ্যে নতুন মোড়

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১০ ১১:৫৩:৩১
ভারতের সাথে কমছে, পাকিস্তানের সাথে বাড়ছে: বাণিজ্যে নতুন মোড়

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভারত ও পাকিস্তান—দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দেশ দুটি, যাদের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রায়ই উত্তপ্ত থাকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সম্পর্কের উপর বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটছে, যা বাংলাদেশের বাণিজ্যেও প্রভাব ফেলেছে। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভারতপ্রীতি এবং পাকিস্তান বিরোধিতার কারণে বাংলাদেশ তার বাণিজ্যিক সুবিধা অনেকটাই হারিয়েছে। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে, এবং এর প্রভাব দেশের বাণিজ্যিক অবস্থা পরিবর্তন করেছে।

বাংলাদেশ ভারতের থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ বেশ বাড়িয়েছে, তবে আমদানি মূল্য কিছুটা কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৩ কোটি ২২ লাখ মেট্রিক টন পণ্য ভারত থেকে আমদানি করেছে, যার মূল্য ছিল ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমে ২ কোটি ৭১ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে, তবে তার বিপরীতে ভারতকে পরিশোধিত অর্থ বেড়েছে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানি আরও কমে ১ কোটি ২৪ লাখ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতকে রপ্তানির পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে, যা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাকিস্তান থেকে প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়েছিল, যার মূল্য ছিল ৭ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ পরিমাণ বেড়ে ১৯ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন হয়েছে, এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১০ লাখ ৮১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়েছে। পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশও রপ্তানি বাড়িয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ পাকিস্তানে প্রায় ৮৩১ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে।

বাণিজ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ভারত ও পাকিস্তান—উভয় দেশ থেকেই বাংলাদেশ অনেক বেশি পরিমাণ পণ্য আমদানি করছে, যা দেশের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। তবে, ভারত থেকে আমদানি কমিয়ে রপ্তানির পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ে তুললে বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্যিকভাবে অনেক সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, কারণ পাকিস্তান থেকে কিছু কাঁচামাল এবং উৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশে চাহিদা রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, পাকিস্তান থেকে হোম টেক্সটাইল ও সুতা আমদানির খরচ কমবে, যা দেশের পোশাক শিল্পের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। একই সঙ্গে, ব্যবসায়ীরা ভারতের সাথে সম্পর্কের উন্নতি চান, কারণ চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ভারত একটি সহজ ও সাশ্রয়ী বাজার হতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারতের সাথে বাণিজ্য বাংলাদেশের জন্য বেশ সুবিধাজনক, কারণ সেখান থেকে পণ্য কম খরচে এবং দ্রুত আসতে পারে। তবে, পাকিস্তান থেকে আমদানি বাড়ানো গেলে, তা দেশের বিভিন্ন শিল্পের জন্য উপকারী হতে পারে, বিশেষত টেক্সটাইল শিল্পের জন্য।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, বাংলাদেশকে বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত, যাতে দেশের পণ্যসামগ্রী সাশ্রয়ী ও দ্রুতভাবে আমদানি করা যায় এবং একইসঙ্গে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হয়।

আমিনুল/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে