ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫
Sharenews24

পোশাক শিল্প: বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার নাকি উজ্জ্বল?

২০২৫ জানুয়ারি ২৮ ১০:১৩:৫২
পোশাক শিল্প: বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার নাকি উজ্জ্বল?

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্প দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত, যা বছরের পর বছর ধরে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি এবং রপ্তানি আয় নিশ্চিত করেছে। এই খাতে প্রায় ৪০ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে এবং দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে পোশাক শিল্প থেকে। তবে, বিভিন্ন প্রভাবশালী বিষয় যেমন জ্বালানি সংকট, আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা, মূল্যস্ফীতি, এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে এই খাতটি বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

বর্তমানে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার ফলে পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের গ্যাসচাহিদা বৃদ্ধি পাবে। যেমন, পোশাক শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো বছরে প্রায় ১ হাজার ৪০০ এমএমসিএম গ্যাস ব্যবহার করে, এবং যদি গ্যাসের দাম ৪৫ টাকা বৃদ্ধি পায়, তবে এই খাতে অতিরিক্ত প্রায় ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা খরচ বৃদ্ধি হবে, যা রপ্তানি আয়ের ১.৫ শতাংশ। একইভাবে, টেক্সটাইল শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর জন্য প্রায় ১১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ পড়বে, যা রপ্তানি আয়ের ২.৭ শতাংশ।

এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খরচের বৃদ্ধিও শিল্পের জন্য বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুতের দাম প্রায় ৩৩.৫ শতাংশ বেড়েছে এবং ডিজেলের দাম ৬৮ শতাংশ বেড়েছে গত পাঁচ বছরে, যা উৎপাদন খরচে ৫০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি ঘটিয়েছে। ব্যাংক সুদের হারও বেড়ে গিয়ে ১৪-১৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা শিল্প কারখানাগুলোর জন্য অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

গ্যাস সরবরাহের অপ্রতুলতা এবং তার অপ্রত্যাশিত ব্যাহততা অনেক শিল্প কারখানায় উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে, বিশেষ করে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভারের শিল্প এলাকাগুলোতে। এখানে গ্যাস সংকটের কারণে ৫০-৬০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে। এই সংকটের কারণে পণ্য উৎপাদনের সময়সীমা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী পোশাক আমদানি-রপ্তানি বাজারে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষত, ২০২৪ সালে গ্লোবাল ট্রেড আপডেট অনুযায়ী, পোশাক আমদানি ৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ থেকে আমদানি হওয়া পোশাকের মূল্য আগের বছরের তুলনায় কমেছে প্রায় ৪-৫ শতাংশ, যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে, রপ্তানি খাতে প্রণোদনার পরিমাণও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তাদের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার যদি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর করে, তবে এতে শিল্প খাতের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে এবং রপ্তানি আয় ও শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিটিএলএমইএ এবং অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সরকারকে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। তারা আশঙ্কা করছেন, এই খরচ বৃদ্ধির ফলে তাদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা হারাতে হতে পারে এবং আরও বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিল্প মালিকরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে তাদের ব্যবসা চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

সব মিলিয়ে, পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের ওপর চাপ বাড়ানোর ফলে এটি বাংলাদেশের শিল্পায়ন এবং অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে