ঢাকা, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

সরকারি চাকরিতে আর থাকছে না পেনশন প্রথা

২০২৪ জুলাই ০৩ ১১:১৯:৩৫
সরকারি চাকরিতে আর থাকছে না পেনশন প্রথা

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে যেসব ব্যক্তি সরকারি চাকরিতে যোগদান করবেন তারা আর প্রচলিত পেনশন সুবিধা পাবেন না। এর পরিবর্তে তাদেরকে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন আগামী বছরের অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১ জুলাই বা তৎপরবর্তীতে যোগদানকারী সরকারি কর্মচারীরাও সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসবেন।

বর্তমানে সরকারি চাকুরেদের বিদ্যমান পেনশন নীতিমালা অনুযায়ী ২৫ বছর চাকরি হওয়ার পর যে কেউ চাকরি থেকে অবসর নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে তার বেসিকের বা মূল বেতনের ৯০ ভাগ পেনশন হিসেবে গণনা করা হয়।

এ ছাড়াও প্রতি বছর মূল পেনশনের সমপরিমাণ ২টা উৎসব ভাতা, ২০% বৈশাখী ভাতা, পে-স্কেল হলে নতুন করে পেনশন নির্ধারণের সবিধাও প্রাপ্য হন। আরো আছে, ৫% বিশেষ ভাতা।

বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী পেনশন পাবার জন্য কোনো সরকারি চাকুরেদের বেতন থেকে কোনো প্রকার অর্থ কর্তন করা হয় না। সব অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে দেয়া হয়ে থাকে।

অন্য দিকে সর্বজনীন পেনশন নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি চাকুরেদের পেনশন পেতে হলে মাসিক দুই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা জমা করার প্রয়োজন হবে। বাকি সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রদান করবে।

এই কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিবর্গ অবসরের সময়ে এককালীন কোনো অর্থ পাবেন না। তারা মাসিক চাদা বা জমার বিপরীতে অবসরকালীন সময়ে লাম্পগ্রান্ট পাবেন।

এদিকে গত ১ জুলাই সোমবার থেকে থেকে সরকারের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয়’ স্কিম যাত্রা শুরু করেছে। স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে চলতি বছরের ১ জুলাই বা তৎপরবর্তীতে যোগদানকারী সব কর্মচারী বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন।

নতুন এই স্কিমে লাম্পগ্রান্ট, পিআরএল ও প্রভিডেন্ট ফান্ড বহাল রাখা হয়েছে। অন্যদিকে চলতি বছরের গত ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিরত আছেন তারা পূর্বের ন্যায় সব পেনশন সুবিধা প্রাপ্য হবেন। আর সরকারি চাকুরেরা যারা আগামী বছরের ১ জুলাই তারিখে চাকরিতে যোগ দেবেন তারা এই প্রত্যয় স্কিমের আওতায়ভুক্ত হবেন।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯০টির মতো প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের (সিপিএফ) আওতাধীন। সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, কোনো পেনশন পান না।

এদিকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রত্যয় স্কিম নিয়ে এক ব্যাখ্যায় বলেছে, বর্তমানে সরকারি পেনশনে আনফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনিফিট সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। ফলে পেনশনের যাবতীয় ব্যয় প্রয়োজন অনুযায়ী প্রদত্ত বাজেট বরাদ্দ থেকে মেটানো হয়। ১ জুলাই ২০২৪ সাল থেকে ফান্ডের ডিফাইন্ড কন্ট্রিবিউটরি সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা চালু হবে বিধায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাসিক জমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা, যা কম হবে তা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন থেকে কাটা হবে এবং সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রদান করবে। অতঃপর উভয় অর্থ ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্পাস অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

আনফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনিফিট সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থায় সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়, যা দীর্ঘমেয়াদে কোনোক্রমেই টেকসই ব্যবস্থা নয়।

অন্যদিকে ফান্ডেড কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে প্রাপ্ত কন্ট্রিবিউশন এবং বিনিয়োগ মুনাফার ভিত্তিতে একটি ফান্ড গঠিত হবে বিধায় এটি দীর্ঘমেয়াদে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ২০০৪ সাল থেকে ফান্ডেড কন্ট্রিবিউটরি পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে।

নতুন পেনশন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর মধ্যে আনা সম্ভব হবে। এতে ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ও ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে