ঢাকা, শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

কিরগিজস্তানে বিদেশিদের ওপর হামলা, আতঙ্কে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

২০২৪ মে ১৮ ২৩:৩০:২৩
কিরগিজস্তানে বিদেশিদের ওপর হামলা, আতঙ্কে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মধ্য এশিয়ার দেশ কিরগিজস্তানে মিসরের কয়েকজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির সংঘর্ষের জেরে বিদেশিদের ওপর হামলা শুরু হয়েছে।

এতে কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও হামলার শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। সেখানে নিরাপত্তাহীনতা আর অনিশ্চিয়তায় দিন কাটছে বাংলাদেশের অন্তত ৮০০ মেডিকেল শিক্ষার্থীর।

আজ শনিবার ( ১৮ মে ) সকাল থেকে মুঠোফোন আর ই–মেইলে কিরগিজস্তানে পড়াশোনা করছেন এমন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী একথা জানিয়েছেন।

কিরগিজস্তানে বাংলাদেশে কোনো দূতাবাস নেই। তবে উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ দূতাবাস কিরগিজস্তানের দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দূতাবাস সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। এ ছাড়া দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ১৩ মে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কয়েকজন মিশরীয় বিশকেক শহরে স্থানীয় দুই-তিনজন বাসিন্দার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এরপর ১৬ মে রাত থেকে বিশকেক শহরে বিদেশিদের ওপর হামলা শুরু করে স্থানীয় লোকজন।

সেখানে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও ভারতীয় ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো হয়। নগরীর ঘরে ঘরে বিদেশিদের মারধর ও ভাংচুর করা হয়। এমনকি তারা মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলে ঢুকে পড়েছে। দেশে পড়তে যাওয়া নারীদের বিরুদ্ধেও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শহরজুড়ে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়।

বিশকেকের রয়্যাল মেট্রোপলিটন মেডিকেল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের বাংলাদেশি ছাত্র সৈয়দ রাকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের কক্ষ থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। সহিংসতা শুরু হয় হঠাৎ। ফলে সবাই নিজ নিজ কক্ষে ফিরতে পেরেছেন, ব্যাপারটা এমন নয়। সে যেখানে পারে লুকিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, ‘যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, আমি দেশে ফিরতে চাই। প্রায় দুদিন হয়ে গেল, খাইনি। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় যখন বিদেশিদের ওপর হামলা শুরু হয় তখন থেকে আমি আত্মগোপনে রয়েছি। যদিও স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে যে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে, আমরা এখনও বিদেশীদের উপর হামলার খবর পাচ্ছি।’

কিরগিজস্তানের স্টেট মেডিক্যাল একাডেমির দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী সায়মা কবির জানান, মিশরীয় ছাত্ররা স্থানীয় জনগণের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার পর থেকে এখানকার লোকজন বিদেশী ছাত্র ও শ্রমিকদের উপর হামলা চালাচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য আমাদের সাহায্য দরকার। আমি যে হোস্টেলে আছি সেটাও নিরাপদ নয়। বিক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন এখন হোস্টেলের বাইরে অবস্থান করছেন। যখনই তারা বিদেশিদের খুঁজে বেড়াচ্ছে, তখনই তারা নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে।

দেশে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পাঠানো বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা ১৫-২০ জনের একটি কক্ষে লুকিয়ে আছে। সেখানে এক ব্যক্তিকে নির্দয়ভাবে মারধর করা হচ্ছে। একজন রাস্তায় পড়ে আছে। তবে কোন দেশের নাগরিক, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজন একসঙ্গে ২০-২৫টি গাড়িতে করে শহরে টহল দিচ্ছে।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাপ ব্যবহার করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অবস্থান শনাক্ত করা হচ্ছে। এসব হামলায় বাংলাদেশি শ্রমিক ও ছাত্ররাও আহত হয়েছেন। কতজন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন তার সংখ্যা কেউ দিতে পারেনি।

কিরগিজস্তানে কতজন বাংলাদেশি আছে তার কোনো পরিসংখ্যান বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে নেই। দূতাবাস অনুমান করে যে ৬০০থেকে ৮০০ ছাত্র এবং হাজার হাজার শ্রমিক কিরগিজস্তানে রয়েছে।

জানতে চাইলে উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, কিরগিজস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ছাড়া কোনো বাংলাদেশি আহত বা নিহত হয়েছেন এমন কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন,‘আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে বের না হতে বলা হয়েছে। কিন্তু আবারও সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে।’

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ছাত্ররাও সরাসরি ফোন করছে। দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করার জন্য একটি নম্বর চব্বিশ ঘন্টা পাওয়া যায়।

শেয়ারনিউজ, ১৮ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে