ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

অর্থনীতির সব সূচকই স্বস্তিদায়ক: বাংলাদেশ ব্যাংক

২০২৩ নভেম্বর ২১ ২৩:১৬:২৪
অর্থনীতির সব সূচকই স্বস্তিদায়ক: বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃত খাতের প্রায় সব সূচকই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ও উন্নত বিশ্বের নীতি সুদহারের ক্রমাগত বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিকূলতার প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির বৈদেশিক খাত সাম্প্রতিককালে অনেকটা চাপের মুখে পড়ে। তবুও বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রকৃত খাতের প্রায় সব সূচকই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারি নীতি সহায়তার ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি বিশেষ করে কৃষি উৎপাদন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পরিস্থিতি বেশ ভাল অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি শিল্পোৎপাদন, যা শিল্প উৎপাদন সূচকের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তাতে ভাল প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকারের উৎপাদনমুখী ও উন্নয়নমুখী ব্যয় বৃদ্ধি অর্থনীতির গতিশীলতাকে চলমান রাখার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। অন্যদিকে রাজস্ব আহরণের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সরকারের রাজস্ব আয়ও যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের জাতীয়ে আয়ের প্রবৃদ্ধি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও সন্তোষজনক থাকবে বলে আশা করা যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, বিরাজমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ভাল প্রবৃদ্ধি স্বত্বেও আমদানি ব্যয়ের অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধির ফলে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের বৈদেশিক খাত বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হারের উপর জোরালো চাপ পরিলক্ষিত হয়।

এছাড়াও, বৈশ্বিক পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, বাংলাদেশি টাকার অবমূল্যায়ন এবং অভ্যন্তরীণভাবে মৌসুমি আবহাওয়ার প্রতিকূল প্রভাব ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়াসহ সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ বিনিময় হার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ প্রশমনে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর মধ্যে নীতি সুদহারের বৃদ্ধি, আমানত ও ব্যাংক ঋণের সুদহারে সীমা তুলে দিয়ে তা বাজারমুখী করা, টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ না দেওয়া, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হারকে বাজারমুখী করা, আমদানি মূল্য যাচাইসহ বৈদেশিক মুদ্রা বাজার তদারকি বৃদ্ধি করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হতে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি ব্যয় মিটানোর ব্যবস্থা নেওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গতবছরের প্রায় ৩.৩ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি কাটিয়ে সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মত উদ্বৃত্ত পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে, ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের পূর্বের একটা স্বস্তিদায়ক উদ্বৃত্ত অবস্থা থেকে ঘাটতি পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণে সার্বিক বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যে এখনো কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। আশা করা যায়, বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্য শীঘ্রই একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থা ফিরে আসবে, যা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণসহ মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনায়নে আরো সহায়ক হবে।

দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সময়োপযোগী ও কার্যকর নীতি গ্রহণের ফলে বর্তমানে বিদ্যমান মুদ্রা বিনিময় হার প্রকৃত কার্যকর বিনিময় হার সূচকের সাথে অনেকটাই সংগতিপূর্ণ রয়েছে। এক্ষেত্রে, আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি তাদের নীতি সুদহার আর না বাড়ায় কিংবা হ্রাস করে তাহলে আমাদের বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনায়নে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, বর্তমান রিজার্ভ আইএমএফের বিপিএম-৬ অনুযায়ী প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মত আছে, যা দিয়ে প্রায় ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মিটানো সম্ভব। এটা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যেকোনো অর্থনীতির জন্য স্বস্তিদায়ক।

বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের সংকোচনমূলক যুগপৎ নীতি পদক্ষেপ এবং উৎপাদন ও বিনিয়োগ সহায়ক নীতির ফলে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির আশু উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। উল্লেখ্য যে, আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে দেশের মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৮ শতাংশে এবং জুন শেষ নাগাদ ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, আগামী সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হওয়ার পর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি হবে এবং অর্থবছরের শেষ নাগাদ দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সাম্প্রতিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকার উভয়েই আর্থিক ও রাজস্ব খাতে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে শীঘ্রই দেশের রপ্তানি ও রেমিটেন্সের প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির বৈদেশিক খাতে স্থিতিশীলতা এবং মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থা ফিরে আসবে বলে আশা করা যায়। দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক ভূ-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধি মাধ্যমে আগামীতে বাংলাদেশ আরো শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।

শেয়ারনিউজ, ২১ নভেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে