ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার সুযোগ

২০২৩ আগস্ট ২৮ ০৬:৩১:০৬
পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিভিন্ন দেশে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে । বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা ও সহযোগিতায় এই অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার সক্রিয় তৎপরতা চলছে।

অভিযান শুরু করেছে সিঙ্গাপুর, কানাডা, কাতার, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ শহরকেন্দ্রিক বিভিন্ন দেশ। এতে বেশকিছু সম্পদ ও অর্থ পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থ পাচারকারীরাও আতঙ্কে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ। কারণ, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে সই করেছে বাংলাদেশ। ফলে সুযোগ কাজে লাগিয়ে আগে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে উদ্যোগ নিতে পারে। তবে এই ব্যাপারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সংশ্লিষ্ট দেশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা না থাকলে অর্থ ফেরত আনা কঠিন।

জানা যায়, ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বেপরোয়াভাবে বেড়েছে। ইতোমধ্যে পাচারকারী কিছু ব্যক্তির নাম বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাপা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ৬টি সংস্থার রিপোর্টে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের তথ্য আসছে। এগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই), সুইস ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (আইসিআইজে) প্রকাশিত পানামা প্যারাডাইস ও পেনডোরা পেপারস, জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) রিপোর্ট এবং মালয়েশিয়ার প্রকাশিত সে দেশের সেকেন্ড হোম রিপোর্ট।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও সিঙ্গাপুরে বেশকিছু বাংলাদেশির অর্থ পাচারের তথ্য মিলেছে। পানামা, প্যারাডাইস এবং প্যানডোরা পেপারস এ পর্যন্ত অর্থ পাচারকারী হিসাবে ৯০ জন ব্যবসায়ীর নাম প্রকাশ করেছে।

জিএফআই সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৬ লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে, যা বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় সমান। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে ২০টি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব।

এছাড়া এই অর্থে ৭০৫ বার চাঁদে যাওয়া যায় (ভারতের চন্দ্রাভিযানের খরচ ৮৫০ কোটি টাকা হিসাবে)। বাংলাদেশ থেকে পাচার করা এই অর্থের বড় অংশই শীর্ষ ১০ দেশে। এগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, হংকং ও থাইল্যান্ড।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশ থেকে ভারতে অর্থ পাচারের তথ্য আসছে। বর্তমানে এর অধিকাংশ দেশেই অভিযান চলছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ন্যাটো সদস্যভুক্ত অন্যান্য দেশ। তবে অনেক আগে থেকেই এই যুদ্ধের পরিকল্পনা করেন রুশ প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিন।

পশ্চিমাদের ধারণা, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আগেই তাদের বিবেচনায় ছিল। ফলে রাশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য কিছু অংশ অন্য দেশে সরিয়ে আনে।

এছাড়াও যুদ্ধ শুরুর পর এই অঞ্চলের অনেক দেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। ফলে রাশিয়া এবং মিত্র বিভিন্ন দেশের সম্পদের খোঁজে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোভুক্ত বিভিন্ন দেশ। তাই সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, কাতারসহ শহরকেন্দ্রিক বিভিন্ন রাষ্ট্রের ওপর নজর রাখছে পশ্চিমারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রে। এক্ষেত্রে কিছু অর্থ পাচারকারীর সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলেছে। বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি আরোপের ফলে দেশটিতে নতুন করে অর্থ পাচার কমবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এসব ইস্যুতে বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুসরণ করে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডস। ফলে এসব দেশেও পাচারকারীদের স্বস্তি মিলবে না।

এছাড়াও বিশ্বব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ৮ আগস্ট বাংলাদেশ সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয়কারী রিচার্ড নেফিউ। এই সময় তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ভবিষ্যতে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারা এ দুর্নীতিসংক্রান্ত সমস্যাটিকে অগ্রাধিকার দেবে। তিনি বলেন, আমরা চাই সব দেশ সহযোগিতা করুক। একটি একক দেশ বা প্রতিষ্ঠান এটা করতে পারে না।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তিনি সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন, যাতে সমাজে কোনো দায়মুক্তি ও বিরূপ প্রভাব না পড়ে। পররাষ্ট্র সচিব জানান, মার্কিন কর্মকর্তা তাকে বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি হাতিয়ার।

তিনি বলেন, ‘আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধে সক্ষমতা বাড়ানোর কথাও বলেছি এবং যেসব দেশ পাচারকৃত অর্থ পেয়েছিল, তাদের সমর্থনের কথাও বলেছি।’

এদিকে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া। ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) নীতিমালা মেনে এই অভিযান। এক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন সংশোধন করেছে সিঙ্গাপুর। সম্প্রতি দেশটির পুলিশ অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিযান চালায়। এতে বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার করা ১০০ কোটি ডলারের অর্থসম্পদ জব্দ করা হয়। অভিযানে ১০ জন বিদেশিকে গ্রেফতার করা হয়। সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন আরও ২০ জন।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে মালয়েশিয়া। দেশটির দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা চলতি বছরের জুলাইয়ে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বেশকিছু সম্পদ জব্দ করে। ২শ কেজি স্বর্ণ, নগদ অর্থ এবং অন্যান্য সম্পদ রয়েছে।

বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ পাচারের নিরাপদ স্থান হিসেবে খ্যাত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিখ্যাত শহর দুবাই। সম্প্রতি দেশটি ৫০টি কোম্পানির নিবন্ধন স্থগিত করেছে। এছাড়াও ২২৫টি কোম্পানিকে জরিমানা করেছে তারা। সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে এখন কাজ করছে দেশটির বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।

শেয়ারনিউজ, ২৭ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে