ঢাকা, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
Sharenews24

সংস্কার ও বাজেটের হাওয়ায় চাঙা হওয়ার পথে শেয়ারবাজার

২০২৫ মে ৩১ ১৫:২৩:৪৫
সংস্কার ও বাজেটের হাওয়ায় চাঙা হওয়ার পথে শেয়ারবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে সম্প্রতি নেওয়া সংস্কারমূলক পদক্ষেপ এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির উদ্যোগগুলো বাজারে নতুন করে আস্থা ফিরিয়ে আনছে। পাশাপাশি আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটেও বিনিয়োগকারীদের জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনার ইঙ্গিত মিলেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে, দেশের শেয়ারবাজার শুধু শক্ত ভিত্তির ওপরই দাঁড়াবে না, বরং অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবেও প্রাণ ফিরে পাবে।

শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সম্প্রতি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে: যেগুলো হল-

বিও হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি হ্রাস

বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে, বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ নতুন বিনিয়োগকারীদের বাজারে আকৃষ্ট করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ব্রোকারদের তারল্য সংকট মোকাবিলা

সমন্বিত গ্রাহক হিসাব (সিসিএ) থেকে অর্জিত সুদের ২৫ শতাংশ ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ডে জমা দিয়ে, বাকি ৭৫ শতাংশ ব্রোকাররা ব্যবহার করতে পারবেন। এর ফলে ব্রোকারদের নগদ প্রবাহের ওপর চাপ কমবে এবং বাজারে তারল্য সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে।

কমোডিটি মার্কেট চালুর অনুমোদন

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) কমোডিটি মার্কেট চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি পণ্যভিত্তিক লেনদেনের নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং শেয়ারবাজারে বৈচিত্র্য আনবে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

বাজেটে আসছে প্রণোদনা

আগামী বাজেটে শেয়ারবাজারের গতিশীলতা বাড়াতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনা প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রণোদনাগুলোর মধ্যে থাকতে পারে-

অগ্রিম আয়কর

বর্তমানে প্রতি ১ লাখ টাকার লেনদেনে ৫০ টাকা হারে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) কাটা হয়। আসন্ন বাজেটে এ হার কমিয়ে ১৫ টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য স্বস্তি বয়ে আনবে।

করপার্থক্য বৃদ্ধি

তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করপার্থক্য অন্তত ১০ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়েছে। এই পদক্ষেপ আরও বেশি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত করবে এবং বাজারের গভীরতা বাড়াবে।

ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের কর ছাড়

ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স সম্পূর্ণ মওকুফ এবং এক লাখ টাকা পর্যন্ত ডিভিডেন্ড ট্যাক্স করমুক্ত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ডিভিডেন্ড ট্যাক্সকে চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে, যা বিনিয়োগকারীদের নিট মুনাফা বৃদ্ধি করবে।

সরকারি বন্ড শেয়ারবাজারে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ড প্রাইমারি মার্কেটের পরিবর্তে স্টক মার্কেটের মাধ্যমে ইস্যু করার প্রস্তাব বাজেটে তোলা হতে পারে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন এবং সুরক্ষিত বিনিয়োগের মাধ্যম তৈরি হবে, যা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ উৎসাহিত করবে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকারের আন্তরিকতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্রিয় ভূমিকা বাজারে আস্থা ফেরাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তারা আশাবাদী, আসন্ন বাজেটেও এই প্রণোদনাগুলো বাস্তবায়ন হলে শেয়ারবাজার দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভে রূপ নিতে পারবে। এসব পদক্ষেপ সম্মিলিতভাবে শেয়ারবাজারকে একটি টেকসই এবং শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে