ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

জাপান যাবেন ৭৯ অতিথি, সরকারের খরচ ২০ কোটি টাকা!

২০২৩ আগস্ট ২৬ ১৯:৫২:৫৮
জাপান যাবেন ৭৯ অতিথি, সরকারের খরচ ২০ কোটি টাকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশ-জাপান সরাসরি ফ্লাইট শুরু হচ্ছে ১ সেপ্টেম্বর থেকে। এ উপলক্ষে উদ্বোধনী ফ্লাইটে ৭৯ জন অতিথিকে নিয়ে যাচ্ছে বিমান। তারা সবাই ৫ দিন জাপানে থাকবেন। এই সময়ের জন্য বাজেট আনুমানিক প্রায় ২০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অধীনস্থ কোম্পানিগুলোতে দেওয়া কৃচ্ছ্রসাধনের নির্দেশনা উপেক্ষা বাংলাদেশ বিমানের এই ভ্রমণের খবর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিমান সূত্রে জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জাপানের নারিতা পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। সপ্তাহে তিন দিন ঢাকা থেকে নারিতা ফ্লাইট থাকবে। সেই রুটের টিকিট ইতিমধ্যেই বিক্রি শুরু হয়েছে।

গত ২৫ জুলাই থেকে এই রুটের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকা ছাড়াও কাঠমান্ডু, দিল্লি ও কলকাতা থেকেও যাত্রীরা বিশেষ মূল্যে ওই রুটের টিকিট কিনতে পারবেন। ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ৫ শতাংশ ছাড়ে টিকিট বিক্রি হয়েছে। অফার ছাড়া ঢাকা থেকে এই রুটের সর্বনিম্ন একমুখী ভাড়া ৭০ হাজার ৮২৮ টাকা থেকে শুরু হয় এবং ফিরতি টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ১ লাখ ১১ হাজার ৬৫৬ টাকা।

ঢাকা থেকে বিমানের ফ্লাইটগুলো প্রতি শুক্রবার, সোমবার ও বুধবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে নারিতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এবং নারিতা থেকে প্রতি শনিবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে ছাড়বে। শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, বিমানের ফ্লাইট বিজি-৩৭৬ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে যাত্রা করবে এবং শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে জাপানের নারিতায় পৌঁছাবে। নারিতা থেকে প্রথম ফ্লাইট, বিজি-৩৭৭, নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ২ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ১১টায় যাত্রা করবে এবং শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় ঢাকায় পৌঁছাবে।

এদিকে, গত ২ আগস্ট বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুল আউয়ালের সই করা এক অফিস আদেশে বলা হয়, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সরকারের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় মন্ত্রণালয়গুলো, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং অধিদপ্তর, বিভাগ, অফিস, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, জনসাধারণ সকল স্তরের সেক্টর, কর্পোরেশন এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির কর্মকর্তাদের সমস্ত ধরণের বিদেশ ভ্রমণ পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। সেখানে স্বাক্ষর করেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী শফিউল আজিম।

এমন পরিপত্রের পরও বিমান এ সময়ে ৭৯ জনের বিশাল বহর নিয়ে নারিতায় যাওয়ায় এ নিয়ে চলছে তীব্র সমালোচনা। এমনকি অতিথিদের মধ্যে কেউ ‘তদবির’ করে নাম লিপিভুক্ত করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। নারিতায় যাওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়, বিমান, বেবিচক কর্মকর্তা ও মিডিয়াকর্মীরা তদবির করেছেন। মোট ৭৯ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ড. মাহবুব আলীর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের ২০ জন কর্মকর্তা সফরে যাচ্ছেন। এছাড়া বিমানের ২৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলে বিমানের এমডি এবং সিইও-সহ মার্কেটিং, কমার্শিয়াল এবং অন্যান্য বিভাগের ডিরেক্টর এবং সিনিয়র এক্সিকিউটিভরা রয়েছেন।

সাংবাদিক প্রতিনিধিদলে ২১ জন সদস্য এবং ১০টি ট্রাভেল এজেন্সি, বিমানের টিকিট বুকিংসহ অনলাইনভিত্তিক পরিষেবার কাজ পাওয়া জিডিএস (গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম) কোম্পানির ৪ জন মিলে মোট ১৪ জন প্রতিনিধি থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিমান কর্তৃপক্ষ ২১ আগস্ট ৭৯ জনের প্রাথমিক তালিকা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। তালিকাটি প্রস্তুত বিমানের মহাব্যবস্থাপক (রাজস্ব) মোহাম্মদ মিজানুর রশীদ এবং মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন তালিকা তৈরি করেছেন। তালিকা প্রস্তুতে তারা ‘অনিয়ম’ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

একটি ট্রাভেল এজেন্সি এই মর্মে অভিযোগ করেছে যে, তারা বিমানের লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও তাদের পরিবর্তে শীর্ষ ১০টি এজেন্সির বাইরের একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘অর্থের বিনিময়ে’ নারিতায় যাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে বিমানের অর্থ ও রাজস্ব শাখার মহাব্যবস্থাপক মিজানুর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, এটা একটা মিথ্যা অভিযোগ। আমি ওই তালিকা প্রণয়ণের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। থাকলে তো আমি আমার নামটাই আগে দিতাম। আমার তো বিভাগই ভিন্ন। এটা আমাকে হেয় করার জন্য বলা হয়েছে। একটা কমিটি করা হয়েছে এ সংক্রান্ত। সেখানেও আমি নেই। এগুলো মূলত পরিচালন বিভাগ এবং মার্কেটিং, জনসংযোগ বিভাগ দেখেন।

পরে, এ বিষয়ে জানার জন্য বিমানের জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা চালালেও তিনি তার ‘চিরাচরিত নিয়ম’ মেনে কল রিসিভ করেননি।

সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউল আজিম বলেন, জাপান এমন জায়গা নয় যেখানে আপনি দু'জন নিয়ে গেলেন, আর ফ্লাইট পরিচালনা করে চলে আসলেন। এটা নিয়ে এত কথা কেন জানি না। আমরা একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। এটি হ্রাস বা বৃদ্ধি হতে পারে। আগামীকাল রোববার (২৭ আগস্ট) তা জানা যাবে। যারা না জেনেই নিউজ করেছে, তাদের বিমান চলাচলের খবর বাদ দিয়ে ঠেলাগাড়ি ঠেলে দিতে বলেছে।

একটি ট্রাভেল এজেন্সি বাদ দিয়ে আরেকটি এজেন্সি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই এজেন্সির কথা বলছেন কেন? আরও একজন বলেছেন। ওরা একটি বেসরকারি এয়ারলাইনসের র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। ওদের নিলে ওরা আমার ব্যবসায়ের স্ট্র‍্যাটেজি জেনে যাবে। আমার যাকে দিয়ে লাভ হবে, আমি তো তাকেই নেব।

উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে জাপানের টোকিও রুটে ফ্লাইট চালু করেছিল বিমান। ১৯৮১ সালে সাময়িক বিরতির পর ঢাকা-নারিতা রুটে প্রথম ফ্লাইট শুরু করে বিমান। পরে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় ২০০৬ সালে জাপানের সঙ্গে বিমানের সরাসরি এ ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। ১৭ বছর পর ১ সেপ্টেম্বর আবার চালু হতে যাচ্ছে এ রুট।

শেয়ারনিউজ, ২৬ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে