ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

সোহরাওয়ার্দীর গাছ কেটে তৈরি করা ভবনগুলো এখন আড্ডার জায়গা

২০২৩ আগস্ট ২৬ ১১:২৯:০৯
সোহরাওয়ার্দীর গাছ কেটে তৈরি করা ভবনগুলো এখন আড্ডার জায়গা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ভবন নির্মাণের এক বছর পেরিয়ে গেলেও রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৭টি রেস্টুরেন্ট এখনও খোলেনি। তালাবদ্ধ ভবনগুলির বারান্দা এবং স্কোয়ারগুলি এমন জায়গা যেখানে লোকেরা আড্ডা দেয়। কেউ কেউ সেখানে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন। কেউবা রাত কাটাচ্ছেন।

ভবনগুলো এখন আড্ডা দেওয়ার জায়গা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রেস্টুরেন্টের জন্য নির্মিত এই ৭টি ভবন নিয়ে অনেকেই এখন কৌতূহলী। এ বিষয়ে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত গণপূর্ত অধিদপ্তর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওপর দায় চাপায়। তবে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এই উদ্যানের আধুনিকায়নে ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়।

প্রকল্পটি গণপূর্ত বিভাগ দ্বারা বাস্তবায়িত হয়। প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালে ওই ৭টি ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ভবনের জন্য ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে উদ্যানের গাছ কাটা শুরু হলে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও পরিবেশবাদীরা প্রতিবাদ করতে থাকেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশে ২০২১ সালের জুন মাসে গাছ কাটা বন্ধ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা গেটের ছবির ফটো হাটের পাশে, উদ্যানের ভিআইপি গেটের পাশে, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন গেটের পাশে, উদ্যান লেকের পাশে, রমনা কালী মন্দিরের পাশে, উদ্যান মুক্তমঞ্চ ও টিএসসি গেটের পাশে রেস্টুরেন্ট ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে ছবির হাটের গেটসংলগ্ন রেস্তোরাঁ ভবনে গিয়ে দেখা যায়, সামনের চওড়া বারান্দার বেঞ্চে কিছু মানুষ শুয়ে আছে। আবার কিছু মানুষ বসে আড্ডা দিচ্ছে। সেখানে বয়স্ক দিলদার হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে উদ্যানে পানি বিক্রি করছেন।

দিলদার হোসেন বলেন, ‘এইটা থাকার জন্য অনেক ভালো জায়গা। রোদ-বৃষ্টি কোনোটাতেই এইখানে আমাগো সমস্যা হয় না। মাঝেমইধ্যে পুলিশ টহলে আসে। তয় আমাগো থাকতে কেউ বাধা দেয় না। বইমেলা আর কোনো বড় অনুষ্ঠান হইলে শুধু থাকা যায় না। গত বছর এইগুলার কাজ শেষ হইছে। এর পর থাইকা তালা মারাই দেখতাছি। আর কেউ কখনো এইগুলা খুলেও নাই, কোনো কাজও করে নাই। এখন মানুষ বসে আড্ডা দেয় আর আমরা থাকি।’

তার কথামতো অন্যান্য রেস্তোরাঁ ভবনেও একই চিত্র দেখা যায়। সেখানেও মানুষজন বসে কথা বলছে, আড্ডা দিচ্ছে। অনেকে আবার লুডু আর তাসে মশগুল। দুপুর ১২টার দিকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় উদ্যানে বিচরণ করা অনেকে এসে ভবনগুলোর বারান্দায় আশ্রয় নেন। প্রতিটি রেস্তোরাঁ ভবন বৃত্তাকার এবং সাদা ও লাল রং করা। প্রতিটি ভবনের সামনে অর্ধ বৃত্তাকার খোলা জায়গা, যা অনেকটা বড় বারান্দার মতো। সেখানে গ্রাহকদের বসে খাওয়ার জন্য শানবাঁধানো বেঞ্চ ও টেবিল রয়েছে। উদ্যানে বিচরণ করা লোকজন এই বেঞ্চে আড্ডা জমায়। বৃষ্টির সময়ও অনেকে এসে বসে। হকাররা এখানে চা-সিগারেট, পানি ও ফুল বিক্রি করে।

প্রতিটি ভবনের অভ্যন্তরভাগ লাল রঙের কলাপসিবল গেট দিয়ে আটকানো। প্রতিটি গেটে দুটি করে তালা। একটা উপরে, একটা নিচে। ওপরের তালা সীলমোহর করা। গেটের ফাঁক দিয়ে ভেতরে তাকালে দেখা যায় এখনও অনেক কাজ বাকি। চুলার জায়গা দেখা গেল না। পানির কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। উল্টো ভেতরে জমে আছে আবর্জনা। শুধু ভিতরের অবস্থাই খারাপ নয়, বাইরের দেয়ালও ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। রমনা কালীমন্দির ও বাগানের মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন দুটি ভবন দেখে মনে হয় বহু বছরের পুরনো।

উদ্যানের ভিআইপি গেটের পাশে রেস্টুরেন্ট ভবনে কথা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন , আমি ৫-৬ বছর ধরে এখানে ঘুরতে আসি। এখানে ২০২১ সাল থেকে গাছ কাটা শুরু হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করলে রাতের অন্ধকারে গাছ কেটে ফেলা হয়। গত বছর দেখলাম সব কাজ শেষ হয়েছে। আমরা কেন তারা এখন পর্যন্ত চালু করা হয়নি তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যানের বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলা হলে গ্রিন প্ল্যানেট, ষোল আনা বাঙালি, ছাত্র ফেডারেশনসহ বেশ কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন আন্দোলনে নামে। এসব সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে প্রতিবাদ জানায়। কখনো সমাবেশের মাধ্যমে, কখনো পার্কে গাছ লাগিয়ে, কখনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবাদ করে। তবে এই প্রতিবাদ সত্ত্বেও রেস্তোরাঁ ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করে গণপূর্ত বিভাগ।

এই প্রতিবাদের মুখে নির্মাণকাজ শেষ করেও এই সাতটি রেস্তোরাঁ চালু হচ্ছে না কেন, এ ব্যাপারে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প। আমাদের কাজ ছিল বাস্তবায়ন করা। আমরা বাস্তবায়ন করে দিয়েছি। এখন কবে তারা রেস্তোরাঁগুলো চালু করবে, এটা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ই বলতে পারবে।’

প্রকল্পের ব্যয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি কাগজ দেখে বলতে হবে। আজকে (গতকাল) সরকারি ছুটির দিন। অফিস চলাকালে এলে জানাতে পারব।’

রেস্তোরাঁগুলোর বিষয়ে কথা বলার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক হাবিবুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার মেসেজ পাঠিয়ে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

শেয়ারনিউজ, ২৬ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে