ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

যুক্তরাজ্যে ভর্তিতে কড়াকড়ি: বাংলাদেশ–পাকিস্তান শিক্ষার্থীদের ধাক্কা

২০২৫ ডিসেম্বর ০৪ ২২:৩৫:৪৯
যুক্তরাজ্যে ভর্তিতে কড়াকড়ি: বাংলাদেশ–পাকিস্তান শিক্ষার্থীদের ধাক্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে। ভিসা জটিলতা এবং কঠোর অভিবাসন নীতিমালা এর মূল কারণ বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষার্থী ভিসা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও নিয়মানুবর্তিতা নিশ্চিত করতে ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দপ্তর নতুন নির্দেশনা কার্যকর করেছে। গত সেপ্টেম্বরে চালু হওয়া ভিসা কমপ্লায়েন্স নীতির আওতায় আন্তর্জাতিক ভিসা স্পনসর হতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রতি বছর ‘বেসিক কমপ্লায়েন্স অ্যাসেসমেন্ট’ (বিসিএ) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, যেখানে ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার, শিক্ষার্থীদের কোর্সে উপস্থিতি এবং মাঝপথে কোর্স ত্যাগের হার মূল্যায়ন করা হয়।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার মোট আবেদনকারীর ৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না, যেখানে আগে সীমা ছিল ১০ শতাংশ। বাস্তবতায় দেখা গেছে, পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের হার ১৮ শতাংশ এবং বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ২২ শতাংশ, যা এই সীমা থেকে অনেক বেশি।

এ প্রেক্ষাপটে কমপক্ষে ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী নিয়োগ স্থগিত বা সীমিত করেছে। ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার পাকিস্তান থেকে ভর্তি ২০২৬ সালের শরৎকাল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে। ওভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় দুই দেশ থেকেই স্নাতক পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ বন্ধ করেছে। সান্ডারল্যান্ড ও কোভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের যুক্তি, ভিসা ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে এই পদক্ষেপ জরুরি।

গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান, অক্সফোর্ড ব্রুকস, ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিতে সাময়িক পরিবর্তন এনেছে। এসব প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, দীর্ঘ ভিসা প্রক্রিয়া, ভুয়া আবেদন এবং নিয়ম লঙ্ঘনের ঝুঁকি তাদের নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলেছে।

যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক অভিবাসন সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো ভুয়া আবেদন কমানো এবং মোট অভিবাসনের হার নিয়ন্ত্রণে রাখা। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে গিয়ে শিক্ষার্থী ভিসাধারীদের রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের সংখ্যাও বেড়েছে, যা বাড়তি উদ্বেগ তৈরি করেছে।

পাকিস্তান এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দেশটির শিক্ষা উপদেষ্টা মরিয়ম আব্বাস বিষয়টিকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে উল্লেখ করে বলেন, প্রকৃত যোগ্য শিক্ষার্থীরা শেষ মুহূর্তে আবেদন বাতিল হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন। তাঁর অভিযোগ, কিছু বিদেশি শিক্ষা এজেন্ট কমিশনভিত্তিক ভর্তি করানোর প্রবণতার কারণে ভুয়া আবেদন বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভরশীল অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিম্ন টিউশন ফি কাঠামোর কারণে দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক চাপে পড়তে পারে। ফলে এই নীতির বিস্তৃত প্রভাব ভবিষ্যতে আরও স্পষ্ট হতে পারে।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র অফিস জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন। তবে পাশাপাশি নিশ্চিত করতে চায়, যুক্তরাজ্যে যে শিক্ষার্থীরা আসবেন তারা যেন প্রকৃত, যোগ্য ও নিয়মমানা হন।

সিরাজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে