ঢাকা, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

যে কারণে ইসলামে নারী-পুরুষের বুদ্ধিমত্তা ভিন্ন

২০২৫ অক্টোবর ৩১ ০৯:১৩:৩২
যে কারণে ইসলামে নারী-পুরুষের বুদ্ধিমত্তা ভিন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে—একজন পুরুষের সাক্ষীর পরিবর্তে কেন ইসলাম দুজন নারীর সাক্ষ্য নির্ধারণ করেছে? এতে কি বোঝায় যে নারীর জ্ঞান বা বুদ্ধি পুরুষের অর্ধেক?

কুরআনের দৃষ্টিতে এটি কোনোভাবেই লিঙ্গ বৈষম্য নয়। বরং এটি সমাজে নারী ও পুরুষের প্রাকৃতিক ভূমিকা ও দায়িত্বের পার্থক্যের ভিত্তিতে একটি বাস্তবসম্মত বিধান।

আল্লাহ্ বলেন:

“হে মুমিনগণ! যদি তোমরা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণচুক্তি করো, তাহলে তা লিখে রাখো। এবং তোমাদের মধ্য থেকে দুজন পুরুষকে সাক্ষী রাখো। যদি দুজন পুরুষ না পাওয়া যায়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন নারী, যাদের সাক্ষ্য তোমরা গ্রহণযোগ্য মনে করো—যাতে একজন ভুলে গেলে অন্যজন তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারে।”— [সূরা আল-বাকারা ২:২৮২]

আয়াতের ব্যাখ্যা

এই আয়াত ব্যবসা বা আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত বিষয়ে প্রযোজ্য। নবী যুগে—এমনকি আজও—বেশিরভাগ সমাজে পুরুষরাই মূলত ব্যবসা ও আর্থিক চুক্তির সঙ্গে বেশি জড়িত থাকে। তাই সাক্ষী হিসেবে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া যৌক্তিক।

তবে যেখানে দুজন পুরুষ পাওয়া সম্ভব নয়, সেখানে একজন পুরুষ ও দুজন নারীকে সাক্ষী রাখা হয়েছে।কারণ—নারীরা সাধারণত এসব লেনদেনের সঙ্গে কম সম্পৃক্ত থাকে; ফলে একজন কিছু ভুলে গেলে অন্যজন মনে করিয়ে দিতে পারে।

এটি নারীর বুদ্ধি বা জ্ঞানের অভাব নয়, বরং ব্যবহারিক সহযোগিতা ও সুরক্ষার একটি ব্যবস্থা—যেন কেউ ভুলের শিকার না হয় বা প্রতারণার সুযোগ না পায়।

একজন অবিবাহিত নারীর দায়িত্ব তুলনামূলকভাবে কম থাকে, কিন্তু বিবাহের পর সংসার, সন্তান, পড়াশোনা, আবেগীয় পরিবর্তন (যেমন মাসিক চক্র ও মেনোপজ) এবং একাধিক দায়িত্বের কারণে নারীদের মানসিক চাপ বেড়ে যায়। এতে তারা মাঝে মাঝে কিছু ভুলে যেতে পারেন। এজন্যই আল্লাহ্ দুজন মহিলাকে সাক্ষী রাখার কথা বলেছেন—যেন একজন ভুলে গেলে অন্যজন মনে করিয়ে দিতে পারেন। এটি কোনোভাবেই নারীদের কম বুদ্ধিমত্তার প্রতীক নয়, বরং তাদের বাস্তব জীবনের প্রতি ইসলামের সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি।

পুরুষেরা সাধারণত কাজগুলো আলাদা করে পরিচালনা করতে পারে এবং এক দিকের চাপ অন্য দিকে নিয়ে যায় না, কিন্তু নারীরা আবেগপ্রবণ হওয়ায় একটি বিষয় মনে ঘুরপাক খেতে পারে। আল্লাহ্ যেহেতু পুরুষ ও নারী উভয়কেই সৃষ্টি করেছেন, তিনি উভয়ের মানসিক গঠন ও দায়িত্ব সম্পর্কে গভীরভাবে জানেন।

হাদিসের ব্যাখ্যা: “বুদ্ধির ত্রুটি” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

সহিহ বুখারিতে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:“হে নারীগণ! সদাকাহ দাও, কারণ আমি জাহান্নামে তোমাদের সংখ্যা বেশি দেখেছি।”

“নারীর সাক্ষ্য কি পুরুষের সাক্ষ্যের অর্ধেক নয়?” তাঁরা বললেন: “হ্যাঁ।”

নবী ﷺ বললেন: “এটাই তাদের বুদ্ধির ত্রুটি।”— [সহিহ বুখারি: ৩০৪, ২৬৫৮]

এখানে “বুদ্ধির ত্রুটি” বলতে স্থায়ী বুদ্ধির ঘাটতি নয়, বরং কিছু নির্দিষ্ট বাস্তব ক্ষেত্রে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বা সীমিত অভিজ্ঞতা বোঝানো হয়েছে।রাসূল ﷺ নিজেই অসংখ্য নারীকে শিক্ষা দিয়েছেন, তাদের থেকে জ্ঞান গ্রহণ করেছেন এবং নারী সাহাবিয়াতদের ইসলামী জ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে সম্মান দিয়েছেন।

ইসলামে সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সমান যেখানে

কুরআনের আরও অনেক আয়াতে সাক্ষ্যের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয়নি, যেমন:

ওসিয়ত (ইচ্ছাপত্র) — “দুজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে সাক্ষী করো।” (সূরা মায়িদা ৫:১০৬)

তালাকের সাক্ষী — “তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে সাক্ষী করো।” (সূরা আত-তালাক ৬৫:২)

ব্যভিচারের অভিযোগ — চারজন সাক্ষী লাগবে, এখানে নারী-পুরুষভেদ নেই। (সূরা আন-নূর ২৪:৪)

স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সাক্ষ্য — একজন পুরুষের শপথই চার সাক্ষ্যের সমান। (সূরা আন-নূর ২৪:৬)

চাঁদ দেখা, হাদিস বর্ণনা বা নারীদের বিশেষ বিষয়—এগুলোতে একক নারীর সাক্ষ্যই যথেষ্ট। আয়েশা (রা.)-এর বর্ণিত ২,২০০+ হাদিসই তার প্রমাণ।

নারীর জ্ঞান কি পুরুষের অর্ধেক?

না, কোথাও কুরআন বা সহিহ হাদিসে বলা হয়নি যে নারীর জ্ঞান পুরুষের অর্ধেক।হাদিসে “বুদ্ধির ত্রুটি” বলতে বোঝানো হয়েছে বিশেষ পরিস্থিতিতে মনোযোগ বা অভিজ্ঞতার ঘাটতি, যা সময়, দায়িত্ব, মানসিক অবস্থা বা প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণে হতে পারে।

একজন নারী যদি জ্ঞান অর্জনে পরিশ্রমী, ন্যায়পরায়ণ ও আল্লাহভীরু হন, তবে তিনি একজন পুরুষের চেয়েও অধিক মর্যাদা অর্জন করতে পারেন।

“নিশ্চয় আল্লাহভীরু ব্যক্তিদের মধ্যেই আল্লাহ্ সর্বাধিক জ্ঞানী।”— [সূরা ফাতির ৩৫:২৮]

মুয়াজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

ধর্ম ও জীবন এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম ও জীবন - এর সব খবর



রে