ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৭৪ শতাংশ ঋণের জামানত নেই

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৪ ২২:৪২:০০
২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৭৪ শতাংশ ঋণের জামানত নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক খাতে (এনবিএফআই) গভীর সংকটের তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০টি সমস্যাগ্রস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণকৃত ঋণের মাত্র ২৬ শতাংশের বিপরীতে নিরাপদ জামানত রয়েছে। অর্থাৎ ৬ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকার ঋণই জোরালো নিরাপত্তার সঙ্গে সুরক্ষিত। বাকি ৭৪ শতাংশ ঋণের জন্য কোনও জামানত নেই, যা বড় অঙ্কের অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনাকে অনিশ্চিত করেছে এবং আমানতকারীদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, সমস্যা প্রবণ ২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টির খেলাপি ঋণের হার ৯৫ শতাংশ থেকে প্রায় শতভাগ। অন্য ১৩টি প্রতিষ্ঠানের ঋণ বোঝা ৫২ থেকে ৮৩ শতাংশের মধ্যে। ফলে মোট খেলাপি ঋণ প্রায় ২১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা, যা ঋণপোর্টফোলিওর ৮৩ শতাংশের বেশি। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলো তরলতা সংকটে পড়ে, আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯টিকে অবসায়নের (লিকুইডেশন) সুপারিশ করা হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন ছাড়া ধীরে ধীরে দেউলিয়া হওয়ার পথে রয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ঋণ ছিল ২৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা, কিন্তু জামানত মাত্র ৬ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণের মাত্র ২৬ শতাংশ সুরক্ষিত।

অন্যদিকে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানত ২২,১২৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক আমানত ১৬ হাজার ৩৬৭ কোটি এবং ব্যক্তি আমানত ৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। জামানতের অমিলই সমস্যার মূল কারণ।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংকট দীর্ঘদিনের দুর্বল তদারকি, অনিয়ম ও রাজনৈতিক প্রভাবের ফল। প্রধান চারটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে:

• প্রভাবশালী গ্রুপের কাছে ঋণ প্রদানের প্রবণতা।

• জামানতের অস্বচ্ছ হিসাব ও স্ব-ঘোষিত মান।

• নিয়ন্ত্রক সংস্থার দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর নজরদারি না থাকা।

• ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা ও দীর্ঘসূত্রি প্রক্রিয়া।

বর্তমান সময়ে অনেক এনবিএফআই প্রধান নির্বাহী ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠান স্বাধীন পরিচালক থাকলেও কার্যক্রম সীমিত এবং বিনিয়োগকারীর আস্থা হ্রাস পেয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চিহ্নিত ২০টি প্রতিষ্ঠান হলো—সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, হাজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আই.আই.ডি.এফ.সি, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স এবং এফএএস ফাইন্যান্স।

এর মধ্যে লিকুইডেশনের তালিকাভুক্ত ৯টি প্রতিষ্ঠান হলো—এফএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলছেন, "নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিকল্প সুযোগ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু দুর্নীতিবাজদের কারণে বিপুল অর্থ লোপাট হয়েছে। মূলধন ও দায়-দায়িত্ব সঠিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রেখে অনিয়মী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজার থেকে সরানোই একমাত্র সমাধান।"

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আমাদের লক্ষ্য আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষা করা। যা ফেরত দেওয়া সম্ভব, তা আইনি ও আর্থিক উপায়ে আদায় করা হবে। বাকিগুলোর ক্ষেত্রে পুনর্গঠন বা অবসায়ন প্রক্রিয়া চলবে।”

বিশ্লেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন—স্বাধীন সম্পদ যাচাই, দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা, ক্ষতিগ্রস্তদের আংশিক ফেরত নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ তহবিল এবং তদারকি শক্তিশালী করা জরুরি।

মিজান/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে