ঢাকা, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ঋণ জালিয়াতির অনন্য উদাহরণ ইউনিয়ন ব্যাংক

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১২:৩৮:১১
ঋণ জালিয়াতির অনন্য উদাহরণ ইউনিয়ন ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি এবং এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যাপক ঋণ জালিয়াতি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, যেখানে ১৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগ অনুসারে, ব্যাংকের ২০টি শাখা থেকে ১০১ জন গ্রাহককে অনুমোদন ছাড়াই প্রায় ৮,৫০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। জামানতের বাজার মূল্য ছিল মাত্র ২,৫০০ কোটি টাকা, যা থেকে বোঝা যায়, প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ বেআইনিভাবে আত্মসাত করা হয়েছে।

এস আলম গ্রুপের নামে ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট ১৯,৩৭৬ কোটি টাকার ঋণ প্রদান করা হয়েছে, যা ব্যাংকের মোট ঋণের প্রায় ৭১ শতাংশ। এই ঋণের কোনো টাকাই এখনও ফেরত আসেনি এবং এর আদায় হওয়ার ব্যাপারে গভীর সংশয় তৈরি হয়েছে। তদুপরি, ১৯টি শাখা থেকে কোনও মঞ্জুরিপত্র ছাড়াই ৪৪ জন গ্রাহককে প্রায় ২,০২৮ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মঞ্জুরিকৃত ঋণের সীমার বাইরে অতিরিক্ত ৪,৫০০ কোটি টাকারও ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

সফটওয়্যার জালিয়াতির মাধ্যমে ৫০ জনের নামে ২,০০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও তার আত্মীয়স্বজনের নামে থাকা আমানত বিভিন্ন কৌশলে ব্যাংক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর নামে থাকা দুই কোটি ৩২ লাখ টাকা নগদে উত্তোলন করা হয়েছে।

২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করা ইউনিয়ন ব্যাংক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নামে লাইসেন্স পাওয়া সত্ত্বেও, সেই বছরই এস আলম গ্রুপ প্রায় ৪০ কোটি টাকায় ব্যাংকের বেশিরভাগ শেয়ার ক্রয় করে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। বর্তমানে ব্যাংকটি দুর্বল অবস্থায় রয়েছে এবং একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা মোট ঋণের ৮৭ শতাংশ। এত বিপুল খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকটি অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে এবং আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষমতা প্রায় শূন্যের কোটায়।

তদন্তে পাওয়া গেছে যে, ব্যাংকটি স্বয়ংক্রিয় তথ্যভান্ডার থেকে এস আলম গ্রুপসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও লেনদেনের তথ্য মুছে ফেলেছে। অভিযোগ আছে, এস আলম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরী ঋণের সঠিক শ্রেণিকরণে বাধা দিয়েছেন এবং আত্মগোপনে চলে গেছেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে চাকরির কথা বলে ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, দোষীদের শনাক্ত করা গেলেও মূল হোতাদের খুঁজে বের করা কঠিন এবং এ জন্য ‘অনেস্ট কমিটমেন্ট’ প্রয়োজন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এস আলম গ্রুপের ছয়টি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ এবং এলসি খোলা বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দেওয়ার জন্য গ্যারান্টি না দেওয়ার সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল।

কেএইচ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে