ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

ভারতের লুকোচুরির ভয়াবহ চিত্র ফাঁস

২০২৫ জুলাই ০৩ ১০:২৫:৪০
ভারতের লুকোচুরির ভয়াবহ চিত্র ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতের উত্তর প্রদেশে অনুষ্ঠিত কুম্ভ মেলায় ‘ক্রাউড ক্রাশে’ (ভিড়ের চাপে) নিহতের প্রকৃত সংখ্যা গোপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিবিসি। সরকারি হিসেবে ৩৭ জন নিহত হলেও, অনুসন্ধানে দেখা গেছে আরও অন্তত ৪৪টি মৃত্যুর ঘটনা সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়নি।

বিবিসি হিন্দির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, গোপনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে অনেক পরিবারকে, আবার অনেকেই কিছুই পাননি। ভিড়ের চাপে মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে মৃত্যুস্থল ও কারণও বদলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

সরকার জানিয়েছে, ৩৫ পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ২৫ লাখ রুপি করে। অথচ বাস্তবে বহু পরিবার পেয়েছে মাত্র ৫ লাখ রুপি, তাও নগদে—অনেক সময় ভিডিও বিবৃতি দিয়ে নিতে হয়েছে সেই অর্থ।

বিবিসি এমন ২৬টি ঘটনার সন্ধান পেয়েছে যেখানে পরিবারের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে, এবং আরও ১৮টি মৃত্যু শনাক্ত হয়েছে যেখানে কোনো ক্ষতিপূরণই দেওয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার দাবি করছে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ‘সঙ্গম নোজ’ এলাকায়। কিন্তু প্রশাসনিক নথিতে মৃত্যুর স্থান দেখানো হয়েছে দেড় কিলোমিটার দূরের ‘ফোর্ট ক্যান্টনমেন্ট’ বা ‘ঝুসি সেক্টর’-এ।

কিছু পরিবার অভিযোগ করেছে, তাদের ‘স্বাক্ষর করিয়ে’ মৃত্যুর কারণ দেখানো হয়েছে হৃদরোগ বা স্বাস্থ্যগত সমস্যা। সরকারি বিধিনুযায়ী, কুম্ভে স্বাভাবিক মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না—এটি এড়াতেই এমন কৌশল।

বিবিসি সাংবাদিকরা ১১টি রাজ্যের ১০০’র বেশি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন, ৮২টি মৃত্যুর ঘটনার প্রমাণ নিশ্চিত করেন। সংগ্রহ করা হয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, মৃত্যুসনদ, ছবি ও ভিডিও। স্থানীয় সাংবাদিকদের সহায়তায় মৃত্যুর স্থান চিহ্নিত করে মানচিত্র তৈরি করা হয়।

বিবিসি একাধিকবার তথ্য জানার চেষ্টা করলেও উত্তর প্রদেশের প্রশাসন বা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।প্রয়াগরাজের পুলিশ কমিশনার ও ‘মেলা অফিসার’ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্তত পাঁচটি পরিবার জানায়, তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মরদেহ নিয়ে বসে ছিলেন—কারও পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য বা সহানুভূতি আসেনি।একজন বলেন,“রোদে বসে ছিলাম বিকেল চারটা পর্যন্ত। কেউ এক গ্লাস জলও দেয়নি।”

অনেকে জানিয়েছেন, মরদেহ নিজেদের গাড়িতে বাড়ি নিয়ে যেতে হয়েছিল কারণ কোনো সরকারি পরিবহন বা সহায়তা ছিল না, যদিও সরকার দাবি করে প্রায় ৫০ হাজার নিরাপত্তাকর্মী, ২,৭৫০টি AI-চালিত সিসিটিভি ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

একজন শোকাহত সন্তান ভাগীরথী গোন্দ জানান, চার মাস পরেও বাবার মৃত্যু সনদ পাননি।“আমার বাবাকে ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। আমি বলেছিলাম, সব কাগজ না পেলে মরদেহও নেব না। তবু আমাকে কোনো দস্তাবেজ দেয়নি।”

কুম্ভ মেলার ভয়াবহতা ও সরকারিভাবে মৃত্যুর সংখ্যা গোপনের অভিযোগে ভারতের প্রশাসনের জবাবদিহিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও অনেক পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি, আবার অনেককে চাপের মুখে ‘ভুয়া নথিতে’ স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তদন্তের ভবিষ্যত গতি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাপ্য ন্যায়বিচার এখন ভারতের সামনে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে