ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

অর্থবছরের শেষ মাসে রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা

২০২৫ জুলাই ০৩ ০৭:২৭:৫০
অর্থবছরের শেষ মাসে রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রপ্তানি খাত যখন একটি ইতিবাচক গতিতে এগোচ্ছিল, তখন অর্থবছরের শেষ মাস জুনে এসে অপ্রত্যাশিতভাবে হোঁচট খেয়েছে। ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) 'কমপ্লিট শাটডাউন' - এই দুই কারণে মাসের শুরু এবং শেষের কয়েক দিন রপ্তানি কার্যক্রম কার্যত বন্ধ থাকায় জুনে রপ্তানি আয় ৭.৫৫ শতাংশ কমেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৪ হাজার ৪৯৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এমন অবস্থা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল। তবে জুনের শেষে অর্থাৎ পুরো অর্থবছর শেষে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮২৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে গত বছরের তুলনায় মোট প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৫৮ শতাংশ, যা বৈশ্বিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ইরান-ইসরায়েল, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতসহ দেশি ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা চাপ ও অস্থিরতার মধ্যেও বেশ ইতিবাচক।

ইপিবি জানিয়েছে, জুন মাসে আয় কমেছে ১৩৯ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। মে মাসে রপ্তানি যেখানে ছিল ৪.৭৪ বিলিয়ন ডলার, জুনে তা নেমে এসেছে ৩.৩৩ বিলিয়নে।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে কারখানা বন্ধ থাকায় এবং মাসের শেষে এনবিআরের কর্মবিরতির কারণে বন্দরের গেট বন্ধ থাকায় রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, "এই সময় বন্দরে অপেক্ষমাণ কার্গোতে রপ্তানি পণ্য লোড হবে কীভাবে এবং রপ্তানি গন্তব্যে যাবে কীভাবে?"

এর আগে গত ২৬ ও ২৭ জুন এনবিআরের 'কমপ্লিট শাটডাউন'-এর কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে বন্দরে রপ্তানি পণ্যের কনটেইনারের স্তূপ জমে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর আগে এমন ছুটি ও শাটডাউনের যুগলবন্দী খুব একটা দেখা যায়নি।

পোশাকমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "আমার কারখানায় জুনে রপ্তানি কমেছে। ছুটি না থাকলে এই মাসে (জুন) রপ্তানি আয় মে মাসকে ছাড়িয়ে যেত।"

মোহাম্মদ হাতেম আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, "আরও কয়েক মাস হয়তো চলবে। কিন্তু এরপর ধাক্কা লাগবে। কারণ অর্ডার নিতে হচ্ছে লোকসানে। কারখানা চালু রাখতে বাধ্য হচ্ছি কমদামে কাজ নিতে। অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে, আরও হবে।"

রপ্তানিতে নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সদর্থক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে। প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে ৮.৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা সার্বিক রপ্তানি প্রবাহকে ইতিবাচক রেখেছে। কৃষিপণ্য রপ্তানিতেও ২.৫২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। বিশেষভাবে, প্লাস্টিক পণ্য খাতে ১৬.২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রপ্তানির নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

অবশ্য কিছু খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিও দেখা গেছে। কাচজাত পণ্যে রপ্তানি কমেছে ৩৮ শতাংশ, আর পাটজাত পণ্যে আয় হ্রাস পেয়েছে ৪.১০ শতাংশ। তবুও সার্বিকভাবে রপ্তানি প্রবাহে ইতিবাচক বার্তা মিলেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশের মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮২৮ কোটি ৩৯ লাখ ডলার, যা আগের বছরের ৪ হাজার ৪৪৬ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। অর্থাৎ, বৈচিত্র্যময় চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দেশের রপ্তানি খাত শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে