ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

গাজায় গণ-হত্যায় জড়িত ৪৮ বহুজাতিক কোম্পানির নাম প্রকাশ

২০২৫ জুলাই ০২ ১২:২০:২৬
গাজায় গণ-হত্যায় জড়িত ৪৮ বহুজাতিক কোম্পানির নাম প্রকাশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় ইসরায়েলি 'গণহত্যায়' সহযোগিতা করা ৪৮টি বহুজাতিক কোম্পানির নাম অন্তর্ভূক্ত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজ।

প্রতিবেদনে ৪৮টি বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নাম উন্মোচন করা হয়েছে, যারা ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ এবং গাজায় ইসরায়েলের 'গণহত্যার যুদ্ধে' সহযোগিতা করছে। আলবানিজের মতে, এসব কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রতিবেদনটি আগামী বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) জেনেভায় আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হবে।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতের জায়ান্ট মাইক্রোসফট, গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেড এবং অ্যামাজন। এই তদন্তের অংশ হিসেবে হাজারের বেশি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের একটি ডাটাবেসও তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "ইসরায়েলের এই চিরস্থায়ী দখলদারিত্ব অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য আদর্শ এক পরীক্ষার মাঠে পরিণত হয়েছে—যেখানে সরবরাহ ও চাহিদা উভয়ই ব্যাপক, নজরদারির সুযোগ নেই বললেই চলে এবং জবাবদিহির কোনো বালাই নেই। বিনিয়োগকারী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অবাধে মুনাফা অর্জন করছে।"

এতে আরও বলা হয়, "প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর শুধু দখলদারিত্বে জড়িয়ে পড়ছে না, বরং তারা সম্ভবত 'গণহত্যার অর্থনীতির' অংশ হয়ে উঠছে।"

অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন, ইতালির লিওনার্দো এসপিএ এবং জাপানের ফ্যানুক করপোরেশন জড়িত রয়েছে। প্রযুক্তি খাতে মাইক্রোসফট, অ্যালফাবেট, অ্যামাজন, আইবিএম এবং পালান্টির টেকনোলজিস ইসরায়েলকে ক্লাউড ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে সহায়তা দিচ্ছে, যা নজরদারি ও তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে।

এছাড়াও, কেটারপিলার, লিওনার্দোর মালিকানাধীন রাডা ইলেকট্রনিক ইন্ডাস্ট্রিজ, দক্ষিণ কোরিয়ার এইচডি হুন্দাই এবং সুইডেনের ভলভো গ্রুপ-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এমন ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে যা অবৈধ বসতি স্থাপন ও ঘরবাড়ি ধ্বংসে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাড়িভাড়া প্ল্যাটফর্ম বুকিং ডটকম এবং এয়ারবিএনবিও ইসরায়েলি দখলকৃত এলাকায় সম্পত্তি ভাড়ার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে।

জ্বালানি এবং কৃষি খাতেও সংশ্লিষ্টতা দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রামন্ড কোম্পানি ও সুইজারল্যান্ডের গ্লেনকোর ইসরায়েলের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা সরবরাহ করছে। চীনের ব্রাইট ডেইরি অ্যান্ড ফুড এবং মেক্সিকোর অরবিয়া অ্যাডভান্স করপোরেশনের মালিকানাধীন নেটাফিম কোম্পানি ফিলিস্তিনি ভূমিতে পানি সম্পদ শোষণে প্রযুক্তি সরবরাহ করছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ঔপনিবেশিক কর্মকাণ্ড ও সংশ্লিষ্ট গণহত্যাগুলো ঐতিহাসিকভাবে করপোরেট খাতের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।’ ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলি সম্প্রসারণকে প্রতিবেদনে ‘ঔপনিবেশিক বর্ণবাদী পুঁজিবাদ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি দখলদার অর্থনীতি থেকে সরে আসার পরিবর্তে বহু করপোরেট প্রতিষ্ঠান সরাসরি ‘গণহত্যার অর্থনীতি’তে যুক্ত হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর জন্য বিশাল মুনাফার সুযোগে পরিণত হয়েছে। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে ইসরায়েলের সামরিক বাজেট ৬৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলারে। আন্তর্জাতিক বিমা প্রতিষ্ঠান এলিয়ানজ ও অ্যাক্সাসহ বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলি দখলদার শেয়ার ও বন্ডে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে।

মিরাজ/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে