ঢাকা, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
Sharenews24

ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন, রাজনীতিতে নতুন গতি

২০২৫ মে ২৭ ১৪:৪৭:০২
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন, রাজনীতিতে নতুন গতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সম্ভাব্য তারিখ ৯, ১০ বা ১১ ফেব্রুয়ারি হলেও, ১০ তারিখে ভোটগ্রহণের সম্ভাবনাই বেশি। নির্বাচন কমিশনও এই সম্ভাব্য সময় ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং শিগগিরই একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রোডম্যাপ ঘোষণার মাধ্যমে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা অনেকটাই প্রশমিত হবে এবং রাজনীতিতে নতুন গতির সঞ্চার হবে।

নির্বাচনের সময় নির্ধারণে সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ও মতামত নেওয়া হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় রেখে ফেব্রুয়ারিকে উপযুক্ত সময় মনে করছে সরকার। কারণ ২০২৬ সালে রমজান শুরু হবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে। এরপর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত থাকবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা এবং গ্রীষ্মের চরম দুর্ভোগ। এসব কারণে নির্বাচনের জন্য সময়ের পরিধি ছোট হয়ে এসেছে।

দেশে এর আগে অনুষ্ঠিত ১২টি জাতীয় নির্বাচনের মধ্যে সর্বোচ্চ তিনটি নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সময় আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকে, কৃষকের কাজের চাপ কমে, শীতের তীব্রতাও খানিকটা কমে আসে—যা নির্বাচন আয়োজনের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।

রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থানে আছে। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাইলেও, সরকার সংস্কার কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে কিছুটা সময় প্রয়োজন মনে করছে। বিএনপির দাবি অনুযায়ী ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিয়ে নতুন সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হোক—এই অবস্থান এখনো তারা বজায় রেখেছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীও রোডম্যাপ চায়, তবে তারা বিচার ও সংস্কারকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ এনসিপি, যারা সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে গঠিত। তারা নির্বাচন আয়োজনের আগে রাষ্ট্র সংস্কার ও ফ্যাসিবাদীদের বিচারের জোর দাবি জানিয়েছে। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত করার উদ্যোগ নিয়েছে। পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পালিয়ে যাওয়া নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা জানান, দেড় হাজার শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই সরকার কোনোভাবেই হালকাভাবে নির্বাচন করতে পারে না। গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে তারা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনকে সমান গুরুত্ব দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তবে বিএনপি বরাবরই রোডম্যাপের জন্য চাপ দিয়ে এসেছে, যার ফলে সংস্কার প্রক্রিয়ায় তাদের সক্রিয় ভূমিকা ততটা দেখা যাচ্ছে না। অন্য দলগুলোর অবস্থানও নির্বাচনমুখী।

সরকারের অভিমত, কম সংস্কার হলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে পারে, বেশি সংস্কার হলে জুন পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব। কিন্তু সময়ের সীমাবদ্ধতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত থাকায় ফেব্রুয়ারিকে মধ্যপন্থা হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

নির্বাচন নিয়ে দেশের বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষকরাও ফেব্রুয়ারিকে একটি বাস্তবসম্মত সময় বলে মনে করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, রোডম্যাপ ঘোষণা রাজনৈতিক অস্থিরতা কমাবে এবং সরকার সচেষ্ট হলে প্রয়োজনীয় সংস্কার ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সম্ভব। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুমও মনে করেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে সেটা সব পক্ষের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে। বিএনপি শুরু থেকেই রোডম্যাপ চেয়েছে, তাই তাদের আপত্তি থাকার কথা নয়।

তবে এনসিপিকে নিয়ে কিছুটা শঙ্কা প্রকাশ করেন অধ্যাপক মাসুম। তিনি বলেন, তারা যদি রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, তাহলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। তবে সরকারের সঙ্গে তাদের বর্তমান সম্পর্ক এবং ছাত্রদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রভাব বিবেচনায়, এনসিপিকে নিয়েই সরকার নির্বাচনের পথে এগোতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সব মিলিয়ে নির্বাচন, বিচার ও সংস্কারের প্রশ্নে সরকার এখন একটি ভারসাম্যপূর্ণ পথ খুঁজছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি নিয়ে সরকার ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তবে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ও জাতীয় ঐক্য।

মারুফ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে