ঢাকা, সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫
Sharenews24

এবি ব্যাংকে ২৫ লাখ ডলারের এলসি: জালিয়াতির আশঙ্কা

২০২৫ মার্চ ১৭ ১১:৩৮:৪০
এবি ব্যাংকে ২৫ লাখ ডলারের এলসি: জালিয়াতির আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে জালিয়াতি বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, এবং বর্তমান সরকারের আমলেও অব্যাহত রয়েছে এসব অনিয়ম। এবি ব্যাংক, যে ব্যাংকটি একটি বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, তাদের গুলশান শাখায় একটি ভয়ঙ্কর কেলেঙ্কারি সামনে এসেছে। ব্যাংকটি ২৫ লাখ ডলার বা প্রায় ৩১ কোটি টাকার এলসি (ঋণপত্র) খোলার মাধ্যমে সন্দেহজনক এক ব্যবসায়িক কার্যক্রমে জড়িত।

এবি ব্যাংকটির গুলশান শাখা একটি নতুন প্রতিষ্ঠানের নামের প্রতি এলসি খোলেছে, যার নাম ‘ইনফিনিট হরাইজন’। এই প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব একেবারেই অস্পষ্ট এবং সন্দেহজনক। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবু নোমান বলে দাবি করা হলেও, ইনফিনিট হরাইজনের কার্যক্রম ও অস্তিত্ব নিয়ে গভীর প্রশ্ন উঠেছে। এই এলসি খোলার প্রস্তাব প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নাকচ করা হলেও, পরে ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই দ্বিতীয় দফায় এলসি খোলেন, যা বাংলাদেশের ব্যাংকিং নীতিমালা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে।

এলসি খোলার উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের জন্য এলসি খোলা হতে পারে। ব্যাংকটি, বিশেষত এবি ব্যাংকের গুলশান শাখার অবস্থা খারাপ থাকার পরও, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের নামে বড় অঙ্কের এলসি খোলা অত্যন্ত রহস্যজনক।

ইনফিনিট হরাইজন প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ও নথিপত্রের মধ্যে অসঙ্গতি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের মার্চে আত্মপ্রকাশ করে এবং ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স পায় ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সালে। তবে, প্রতিষ্ঠানটির অফিসের ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, গ্লোবাল করপোরেশন এবং বিঅ্যান্ডসি নামক প্রতিষ্ঠানেরও তথ্য রয়েছে, যারা এই ব্যাংকের গ্রাহক। তিনটি প্রতিষ্ঠানই সম্ভবত এক ব্যক্তির মালিকানাধীন, এবং তার নাম সেলিম চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের মালিকও।

এবি ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক নাকচ করেছিল। তবে, দ্বিতীয় দফায়, এমডি ব্যাংকটির পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই এলসি খোলেন, এবং এই পদক্ষেপের পর বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বর্তমানে এ বিষয়ে তদন্ত করছে।

এলসি খোলার এই ঘটনার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট (এফআইসিএসডি) তদন্ত করছে। বাংলাদেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এই বিষয়টির গভীর অনুসন্ধান চালাচ্ছে এবং জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্তে জানা গেছে, প্রথমবার যখন এলসি খোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তখন সেটি পাঁচ শতাংশ মার্জিন নিয়ে খোলা হয়েছিল, কিন্তু সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক নাকচ করে দেয়। তবে দ্বিতীয়বার শতভাগ মার্জিন নিয়ে এলসি খোলা হয়, যা আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেছে। এই ঘটনা আরও গভীর সন্দেহের সৃষ্টি করেছে যে, ব্যাংকটি কোনো ধরনের অবৈধ অর্থ লেনদেন বা বিদেশে অর্থ পাচারের জন্য এই এলসি খোলেছে।

এই ঘটনাটি দেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থার নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে। বিশেষ করে, ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এর পক্ষ থেকে কঠোর তদন্তের প্রক্রিয়া চলছে।

আরিফ/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে