ঢাকা, শনিবার, ৩ মে ২০২৫
Sharenews24

তাসনিম জারার জন্য স্বামী খালেদ সাইফুল্লাহর কঠিন সিদ্ধান্ত

২০২৫ মার্চ ০৭ ১৫:১২:৪৭
তাসনিম জারার জন্য স্বামী খালেদ সাইফুল্লাহর কঠিন সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্প্রতি রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ডা. তাসনিম জারা। নতুন ঘোষিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে মনোনীত হয়েছেন তিনি। এবার তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আবেগি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ব্লগার, লেখক ও চিকিৎসক রুমি আহমেদ। আজ শুক্রবার (৭ মার্চ) ফেসবুকে নিজ ভেরিফায়েড আইডিতে একটি পোস্ট দেন রুমি।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে রুমি আহমেদ লেখেন, "নবগঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির যে লিডারশিপ স্ট্রাকচার- তার সবচেয়ে উপরের স্তরে যে লেভেল, তা তাকে ওরা বলছে সুপার টেন! দশজনের এই গ্রুপে তিনজন মেয়ে— তা আমাকে আশ্বস্ত করেছে! তারা প্রথম থেকেই ডাইভার্সিটি এবং ইনক্লুশন প্র্যাকটিসটি আত্মস্থ করেছে। তবে নামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এক্সট্রাঅর্ডিনারি যে নামটা, তা আমার মতে ডা. তাসনিম জারার নাম।"

তাসনিম জারা আমাদের দেশের ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ডিএমসি) গ্র্যাজুয়েট। ডিএমসি থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়ে তিনি ইংল্যান্ড চলে যান। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এভিডেন্স বেজড মেডিসিনে এমএসসি শেষ করেন। এরপর রয়্যাল প্যাপওয়ার্থ হাসপাতাল এবং কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি হসপিটাল থেকে ইন্টারনাল মেডিসিনে রেসিডেন্সি সম্পন্ন করেন এবং এমআরসিপি ডিগ্রি অর্জন করেন। পাশাপাশি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি তাকে ইন্টারনাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট এবং লিড ক্লিনিক্যাল ট্রেইনিং সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ দেয়।

এমআরসিপি ছাড়াও, জারা রয়াল কলেজ অব অবস্টেট্রিক্স এবং গাইনোকোলজিতে নারী স্বাস্থ্য (উইমেন’স হেলথ) বিষয়ে অ্যাডভান্সড ট্রেনিং নেন এবং তিনি একজন ডি আর সি ও জি। চিকিৎসা পেশায় তার ফ্রি টাইম খুবই কম। বিদেশে টিচিং হাসপাতালগুলোতে কাজের চাপ অনেক বেশি— সবচেয়ে জটিল রোগীদের দেখতে হয়, জুনিয়র চিকিৎসকদের ট্রেনিং দিতে হয়, রিসার্চ করতে হয় এবং রিসার্চ পেপার লিখতে হয়। জারা এগুলো সবই করেছে! কিন্তু এসব করার পর, আমার মতো বাড়ি ফিরে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে বসে থাকেনি।

ডা. তাসনিম জারা একটি ইউটিউব হেলথ চ্যানেল চালান। বাংলাদেশের মেডিকেল সোশ্যাল মিডিয়া ল্যান্ডস্কেপে যখন বিভিন্ন ভণ্ড চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী চিকিৎসকরা গুঞ্জন তৈরি করে, তখন তাসনিম জারার চ্যানেলটি সত্যিকারের এভিডেন্স বেজড মেডিসিনের অনন্য উদাহরণ।

আমাদের কালচারে মেয়েদের স্বাস্থ্য অনেক সময় লুকানো এবং চাপানো বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কিশোরী, তরুণী, বিবাহিত বা বয়স্ক মহিলারা অনেক শারীরিক সমস্যার বিষয়ে ডাক্তার তো দূরের কথা, তাদের মায়ের বা হাজবেন্ডের সাথে কথাও বলতে অনিচ্ছুক। এর ফলে আমাদের দেশে ব্রেস্ট ক্যান্সার বা জরায়ু মুখ ক্যান্সার অনেক সময় খুব উন্নত অবস্থায় ধরা পড়ে; এরপর কিছুই করার থাকে না।

জারা তার ১২ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবারের ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের এবং ডায়াস্পোরা কমিউনিটির বিশেষত মহিলাদের স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তার এই কাজের জন্য বাংলাদেশে তাকে লিঞ্চিং করা হলেও, ব্রিটিশ সরকার তার কাজের মূল্য বুঝতে পেরেছে এবং তাকে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। তিনি এখন ব্রিটেনে একটি পরিচিত মুখ, বিবিসি, স্কাই নিউজ, আইটিভি এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র ফাইনান্সিয়াল টাইমসে তার কাজ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং তার ইন্টারভিউ নিয়মিত প্রচারিত হয়।

তার হাজব্যান্ড, খালেদ সাইফুল্লাহ (যার কথা পরে আসবে), এর সাথে মিলে "সহায় হেলথ" নামক একটি বাংলা অ্যাপ ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছেন। এই অ্যাপটি বাংলা ভাষাভাষী বিশেষত নারীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এভিডেন্স বেসড সমাধানের একটি অসাধারণ প্ল্যাটফর্ম। প্রায় এক লক্ষ বাংলাদেশি নারী নিয়মিত এই অ্যাপ থেকে সহায়তা নিচ্ছে।

কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি হসপিটালে কাজ করার সময়, খালেদ সাইফুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তুখোড় ছাত্র ছিলেন এবং ঢাকা ল রিভিউ-এর ফাউন্ডিং চিফ এডিটর। পরে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল হিউমেন রাইটস ল এ মাস্টার্স করেন এবং এক যুগেরও বেশি সময় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনে কাজ করেছেন।

জারা এবং খালেদ সাইফুল্লাহ একত্রে সহায় হেলথ প্রতিষ্ঠা করেছেন, যার সিইও হিসেবে খালেদ এর মূল ড্রাইভিং ফোর্স। নতুন যে দলটি গঠিত হয়েছে, খালেদ তার জয়েন্ট কনভেনর।

এই তরুণ দম্পতি দেশে ফিরে এসেছে! আমরা বাকিরা আসি না, পশ্চিমা কমফোর্টে বসে বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে হাহাকার করি। জারা এবং খালেদ এসেছে। তারা এসে বসে থাকার পরিবর্তে রাজনীতির কঠিন পথে যাত্রা শুরু করেছে। প্রার্থনা করি, তাদের যাত্রা সহজ হোক। তাদের পথ ধরে আরো হাজারো জারা ও খালেদ দেশে ফিরে আসুক এবং আমাদের দেশটি আরো সুন্দর হয়ে উঠুক।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে