ঢাকা, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

এমারেল্ড অয়েলের সম্পদ ফের নিলামে তুলছে বেসিক ব্যাংক

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ১৬ ১৭:৪৫:১৩
এমারেল্ড অয়েলের সম্পদ ফের নিলামে তুলছে বেসিক ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঋণ আদায়ের জন্য একাধিক প্রচেষ্টার পর রাষ্ট্রায়ত্ত ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংক লিমিটেড আবারও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের জামানত হিসেবে বন্ধক রাখা সম্পদ, জমি এবং যন্ত্রপাতি নিলামে তুলছে।

বেসিক ব্যাংকের সূত্র অনুসারে, এর আগে এমারেল্ড অয়েলের সম্পদ কমপক্ষে তিনবার নিলামের জন্য ডাকা হয়েছিল। কিন্তু দরপত্রে ব্যাংকের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় তা কার্যকর হয়নি।

বেসিক ব্যাংক এখন নতুন করে নিলামের চেষ্টা করছে। ঋণ আদায় করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি এমারেল্ড ওয়েলের সম্পত্তি জব্দ এবং বিক্রি করার জন্য গত বছরের ৩০ জুলাই মানি লোন কোর্ট অ্যাক্ট, ২০০৩ এর ধারা ৩৩(৫) এর অধীনে অনুমোদন পেয়েছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি জারি করা একটি নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। যার সময়সীমা ২৫ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে।

নিলাম বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, বেসিক ব্যাংক ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ পর্যন্ত ৯১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বকেয়া দাবি করেছে। উপযুক্ত দরদাতারা এগিয়ে এলে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক যন্ত্রপাতি সহ মোট ৫৪১ শতাংশ জমি নিলামে বিক্রি করা হবে।

বেসিক ব্যাংকের স্পেশাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শেখ জালাল মো. খালিদ বিন হাফিজ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আদালতের আদেশে কোম্পানির সম্পদ পূর্বে নিলামে তোলা হয়েছিল। কিন্তু কাংখিত দাম না পাওয়ায় তা অবিক্রিত রয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, নতুন নিলাম বিজ্ঞপ্তিটি কোম্পানিটিকে দেওয়া ঋণ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার অংশ। ঋণ সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত অর্থ ঋণ আদালত সম্পত্তি জব্দ এবং বিক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে।

বেসিক ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, "যদি সম্পত্তি অবিক্রিত থাকে, তাহলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণের জন্য আদালতে আবেদন করব। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ভবিষ্যতের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"

কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, "বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানিটি পরিচালনার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত করেছে। কিন্তু নতুন মালিক বকেয়া ঋণ নিষ্পত্তি করেননি। আদালতের আদেশ অনুসারে ব্যাংকের ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা সম্পত্তি নিলামে তোলা হবে।"

জাপানি কৃষি কোম্পানি মিনোরি কোং লিমিটেডের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ ২০২১ সালে তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এমারেল্ড ওয়েলের দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন মালিকের নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এমারেল্ড অয়েল উৎপাদনে ফিরে আসে।

কোম্পানির ঋণ, মামলা এবং বিবাদীরা যারা

এমেরাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, পূর্বে এমারেল্ড অয়েল অ্যান্ড পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ, শেরপুর এবং জামালপুরে তাদের জমি এবং কারখানা বন্ধক রেখে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল। ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে ঋণদাতা ২০১৭ সালে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে।

বেসিক ব্যাংকের নথি অনুসারে, মামলায় বিবাদীদের মধ্যে কোম্পানির প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিব, প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৈয়দ মনোয়ারুল ইসলাম, প্রাক্তন পরিচালক সজন কুমার বসাক এবং অমিতাভ ভৌমিক এবং লিয়াকত আলী এবং সৈয়দ মাহবুবুল গণি অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাংক জানিয়েছে, বন্ধকী জমি ও যন্ত্রপাতি নিলাম করা হবে এবং এমারেল্ড অয়েলের পরিচালক এবং অন্যান্যদের শেয়ার ইতিমধ্যেই জব্দ করা হয়েছে।

শুধু বেসিক ব্যাংক নয়, এর অন্যান্য ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং মাইডাস ফাইন্যান্সও তাদের ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য এমারেল্ড অয়েলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

এমারেল্ড অয়েলের আর্থিক বিবরণী অনুসারে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ঋণ ছিল ১৩০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ব্যাংক এশিয়ার ২৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্সের ৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং মাইডাস ফাইন্যান্সের ২৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রয়েছে।

উৎপাদন স্থগিত

ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে এমারেল্ড ওয়েলের উৎপাদন স্থগিত রাখার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজকে জেড ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনে।

নভেম্বরে, কোম্পানিটি ডিএসইকে জানায় যে, গ্যাস সরবরাহের তীব্র ঘাটতির কারণে ১ জানুয়ারী ২০২৪ থেকে কোম্পানিটির কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

শেয়ারবাজারে অর্ন্তভূক্তি

২০১৪ সালে শেয়ারবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে এমারেল্ড অয়েল স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়।

স্পন্দন নামে পরিচিত রাইস ব্রান ভোজ্য তেল উৎপাদন করে এমারেল্ড অয়েল ২০১৬ সাল পর্যন্ত একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত ছিল।

পরের বছর ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ কেলেঙ্কারি প্রকাশ পায়। তখন থেকে কোম্পানিটি ব্যবসায় লোকসান শুরু করে এবং কার্যকরী মূলধনের ঘাটতির কারণে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

দুর্নীতির অভিযোগের মুখোমুখি হয়ে কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

২০২১ সালে মিনোরি বাংলাদেশ সেকেন্ডারি বাজার থেকে ৭.৮১ শতাংশ শেয়ার কিনে কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করে। এরপর কারখানাটি পুনরায় চালু করার জন্য তহবিল বিনিয়োগ করে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি বিনিয়োগ না করায় এখন আবারও কোম্পানিটির ভবিষ্যত অনিশ্চতার দিকেই ধাবিত হচ্ছে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে