ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

ধসে পড়ছে এস আলমের সাম্রাজ্য: তিনটি বাড়িতে এখন শুধুই নীরবতা

২০২৫ জানুয়ারি ২৭ ১৭:২৩:৪০
ধসে পড়ছে এস আলমের সাম্রাজ্য: তিনটি বাড়িতে এখন শুধুই নীরবতা

নিজস্ব প্রতিবেদক : মোহাম্মদ সাইফুল আলম, যিনি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার, বাংলাদেশের এক ডজন ব্যাংক থেকে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা তুলে নিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তোলেন, বর্তমানে তার তিনটি বাড়িতে ব্যাপক নীরবতা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এস আলমের পরিবারের সদস্যরা তাদের বাসাগুলোতে আর ফেরেননি। এসব বাড়িতে আগে নিয়মিত যাতায়াত ছিল ব্যাংক কর্মকর্তাদের এবং এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের, কিন্তু বর্তমানে সেখানে একপ্রকার শূন্যতা দেখা যাচ্ছে। এস আলমের ব্যবহৃত দামি গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং বাড়িগুলোর নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত আনসার সদস্যদেরও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এস আলমের তিনটি বাড়ি চট্টগ্রাম শহরের সুগন্ধা আবাসিক এলাকায়, পটিয়ার গ্রামের বাড়ি এবং ঢাকা বনানীর ওল্ড ডিওএইচএস এলাকায় অবস্থিত। চট্টগ্রামের পটিয়ার আজিমপুরে প্রায় ৫০ একর জমিতে নির্মাণাধীন বিলাসবহুল বাংলোবাড়ির কাজ সরকার পতনের পর বন্ধ হয়ে গেছে। এই বাড়িতে এস আলমের সাত ভাইয়ের জন্য সাতটি বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, যেগুলোর মূল কাঠামো প্রায় তৈরি হয়ে গেছে।

মোহাম্মদ সাইফুল আলমের জন্ম চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় ১৯৬০ সালে। তিনি ব্যবসা শুরু করেছিলেন টিনের এজেন্ট হিসেবে, তবে দ্রুত তার ব্যবসা বিস্তার লাভ করে। ২০০৪ সালে তিনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী সময়ে অন্যান্য ব্যাংকগুলোরও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন, যার ফলে তিনি বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি হয়ে উঠেন। তিনি নিজে, তার পরিবার এবং তার ছেলেমেয়ে ও জামাইদের নাম ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেন এবং সেই ঋণকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করেন।

এছাড়া, এস আলম গ্রুপের ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। এস আলমের এক ভাই, আবদুস সামাদ (লাবু), ছিলেন আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর এসব ব্যাংকগুলো এস আলমের পরিবারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়েছে এবং গ্রাহকদের অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চলছে।

বর্তমানে, এস আলম নিজেকে সিঙ্গাপুরের নাগরিক দাবি করেছেন এবং তিনি তার সুরক্ষা পাওয়ার জন্য সিঙ্গাপুরের আইনের প্রতি আস্থাশীল। তিনি এবং তার পরিবার বর্তমানে সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে সেখানে বসবাস করছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে কিছুটা বাধা সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে তার দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগের পর তার বিরুদ্ধে অর্থ আদায় এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পদক্ষেপে।

পটিয়ায় এস আলমের আদি বাড়ি এখন ফাঁকা হয়ে গেছে। স্থানীয়দের মতে, করোনাভাইরাসের পর থেকে তিনি সেখানে যাননি এবং শোনা যাচ্ছে, তিনি অনেক মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। চট্টগ্রাম শহরের সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় তার সাত তলা ভবনও এখন শূন্য। এখানে তার পরিবার কোনো স্থায়ীভাবে বাস করেন না, এবং আগে যে কর্মচারীরা বাড়িতে কাজ করতেন, তাদেরও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পটিয়ায় গড়ে তোলা হচ্ছে এস আলমের বাংলোবাড়ি, যেখানে সাতটি বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, সরকার পতনের পর এক মাস কাজ চলার পর নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে প্রায় ২০০ শ্রমিক কাজ করতেন, কিন্তু এখন তাদের সংখ্যা কমে গিয়ে মাত্র ৪ জন নিরাপত্তারক্ষী উপস্থিত রয়েছেন।

এদিকে, পটিয়ার বাংলোবাড়ির সামনে ছোট মুদি দোকানও বন্ধ হয়ে গেছে। পূর্বে যেখানে দিনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার খাবার বিক্রি হতো, বর্তমানে তা কমে এক হাজার টাকার নিচে নেমে এসেছে।

এস আলমের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক অনিয়ম ও সরকারের নীতি পরিবর্তনের পর তার নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো এবং সম্পদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে