ঢাকা, শনিবার, ৪ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতির প্রভাব,ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা

২০২৫ জানুয়ারি ০৩ ১৮:০৯:২০
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতির প্রভাব,ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক:বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি ৪২ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত নভেম্বর মাসে এই প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা গত বছরের মে মাসে কোভিড মহামারীর পরবর্তী সময়ে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত বেসরকারি খাতের ঋণের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। জুলাই-অগাস্টের মধ্যে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশে নেমে আসে এবং সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে ৯ দশমিক ২০ শতাংশে পৌঁছায়। পরবর্তীতে এই প্রবৃদ্ধি আরও হ্রাস পেয়ে অক্টোবরের শেষে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। মূলত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী এখন "ওয়েট অ্যান্ড সি" অবস্থানে রয়েছেন এবং তারা এখনও সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

ঋণপ্রবাহে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিবাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বাজারে অর্থপ্রবাহ কমিয়ে রাখার নীতি গ্রহণ করেছে। এর ফলস্বরূপ, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও নিম্নমুখী হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।

ব্যাংক ঋণে সুদের হার বাড়ানোএছাড়াও, ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ঋণ নিতেও অনীহা প্রকাশ করছেন। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকূল নয়, তাই তারা ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছেন।”

ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফও একই অভিমত প্রকাশ করে বলেন, “ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীদের ঋণের খরচ বেড়ে যাচ্ছে, যা তাদের জন্য আর্থিক চাপ তৈরি করছে।”

ব্যবসায়ীদের শঙ্কা এবং বিনিয়োগে শ্লথতাঅস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এবিসিসিআই) সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “ব্যবসায়ীরা এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চান, কারণ উচ্চ সুদের হার এবং অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে তারা বিনিয়োগে আগ্রহী নন।”

অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে গেলে এর প্রভাব ব্যবসায় বিনিয়োগের উপর পড়বে। এতে নতুন শিল্প স্থাপন বা পুরনো শিল্প সম্প্রসারণের গতি ধীর হয়ে যাবে এবং এর পরিণতি কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

সর্বশেষ পরিস্থিতিবর্তমানে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমলেও ভবিষ্যতে এর পুনরুদ্ধার হতে পারে বলে আশা করছেন কিছু ব্যবসায়ী। তবে তাদের মতে, সুদের হার কমাতে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন।

কেএইচ

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে