ঢাকা, শনিবার, ৪ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

রিজার্ভ চুরির ঘটনার পেছনে রিয়াজ, জুবায়ের ও সালেহীনের রহস্যজনক ভূমিকা

২০২৫ জানুয়ারি ০৩ ১৬:৪০:০৩
রিজার্ভ চুরির ঘটনার পেছনে রিয়াজ, জুবায়ের ও সালেহীনের রহস্যজনক ভূমিকা

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাইবার ‘ডাকাতি’ বা হ্যাকিংয়ের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার নাম উঠে আসে, তাদের মধ্যে রিয়াজ, জুবায়ের ও সালেহীন অন্যতম। তাদের কর্মকাণ্ড এবং তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

রিয়াজ, জুবায়ের ও সালেহীন: তাদের কাজ কী ছিল?বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের সহকারী পরিচালক শেখ রিয়াজ উদ্দিন এই ঘটনায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন সুইফট বার্তার মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত আটজনের একজন। ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় রিয়াজ তার কাজ শেষ করে লগআউট করেন। তবে এর আগে, নিয়ম অনুসারে, তিনি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে ১৮টি সুইফট বার্তার মাধ্যমে ৩১ কোটি ৯৭ লাখ ১ হাজার ২০১ মার্কিন ডলারের পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন পাঠান।

রিয়াজের লগআউট করার পর, তার ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অপরাধীরা ৪ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা ৩৬ মিনিট থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি ভোর ৩টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককে মোট ৩৫টি অননুমোদিত সুইফট বার্তা পাঠান। এর মাধ্যমে তারা ৯৫ কোটি ১০ লাখ ৬ হাজার ৮৮৬ মার্কিন ডলার বিদেশি ব্যাঙ্কে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। এর পর, ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক ম্যানিলায় এই অর্থ একাধিক ভুয়া অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে।

এছাড়া, জুবায়ের বিন হুদা এবং সালেহীন নামে দুই কর্মকর্তার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়েছিল এই অননুমোদিত কর্মকাণ্ডে। তাদেরও সন্দেহজনকভাবে এই সিস্টেমে কাজ করার সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছিল। বিশেষভাবে, তাদের আইডি দিয়ে ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড চুরি করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে পরে রিজার্ভের অর্থ চুরি হয়।

কী ঘটেছিল ২০১৬ সালে?২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট সিস্টেম থেকে ৩৫টি পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন পাঠানোর মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬২৩ মার্কিন ডলার চুরি করা হয়। এই অর্থ পরবর্তীতে বিভিন্ন গন্তব্যে চলে যায়, বিশেষত ফিলিপাইনে ক্যাসিনো এবং জাঙ্ক অপারেটরদের কাছে। সাইবার অপরাধীরা রিজার্ভের অর্থ হাতিয়ে নিতে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের মাধ্যমে অস্বীকৃত পেমেন্ট ইনস্ট্রাকশন পাঠিয়েছিল, যদিও ফেডারেল রিজার্ভ পরে কিছু সন্দেহজনক চিহ্ন দেখেছিল এবং পেমেন্ট প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়।

তবে, ব্যাংকটির তদন্তের মধ্যেও আরসিবিসি ব্যাংক এই অর্থ স্থানান্তর করে, যা পরবর্তীতে সাইবার অপরাধীদের হাতে চলে যায়। যদিও তদন্তের পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে, তবে পুরো ঘটনা প্রকাশ্যে আনা এবং এর সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিষয়টি যথাযথভাবে অবহিত করেননি।

তদন্ত প্রতিবেদন এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া২০১৯ সালে, ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এর নেতৃত্বে গঠিত একটি তদন্ত কমিটি ৬১ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অপরাধে জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসে, এবং সুপারিশ করা হয়, এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। তবে, এই প্রতিবেদনটির তথ্য সরকার গোপন রাখতে চেষ্টা করেছে।

২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দেশীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তৃপক্ষকে যথাসময়ে অবহিত করা হয়নি, এমনকি সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এভাবে, রিয়াজ, জুবায়ের এবং সালেহীন সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত এবং তাদের শাস্তির দাবী ওঠে, তবে এখনও পুরো বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্তের আওতায় আনা হয়নি।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে