ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

এমডিশূন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক

২০২৪ অক্টোবর ০৭ ১৬:২১:৫০
এমডিশূন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ শূন্য রয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর এসব ব্যাংকের এমডিকে একসঙ্গে অপসারণ করা হয়। এতে ব্যাংকগুলোর সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এমডি না থাকায় এসব ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যানরাও ভূমিকা রাখতে পারছেন না।

ব্যাংকগুলো হলো- সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, বেসিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)।

সরকারি ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ও বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (ডিএমডি) কয়েকজন এসব ব্যাংকের এমডি হতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও ঋণখেলাপি বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাংকগুলোর মধ্যে বেসিক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ২০০৯-১৪ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে সেটিতে নজিরবিহীন অর্থ লুটপাটের ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা সব জেনেও অনিয়ম ঠেকায়নি। ব্যাংকটির তখনকার এমডি কাজী ফখরুল ইসলামও ছিলেন এসবের সহযোগী। ব্যাংকটিতে এখনো ওই সব লুটপাটের ধকল চলছে। এটির ৬৫ শতাংশ ঋণ ইতিমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে, যার পরিমাণ ৮ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের শেষ এমডি ছিলেন মো. আনিসুর রহমান, যিনি যোগ দিয়েছিলেন ২০২১ সালের এপ্রিলে।

চরম নাজুক অবস্থায় আছে জনতা ব্যাংক। সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত এননটেক্স গ্রুপকে অর্থায়ন করে প্রথমে ব্যাংকটিকে বিপদে ফেলেন। তাঁকে পরের চেয়ারম্যানরাও অনুসরণ করে গেছেন। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে জনতা ব্যাংকের সবচেয়ে বড় গ্রাহক বেক্সিমকো গ্রুপ ঋণ নিতে বেপরোয়া আচরণ শুরু করে। এর কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ফলে জনতা ব্যাংকে গ্রুপটির ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ হাজার কোটি টাকায়।

এর মধ্যে করোনার পর নিয়েছেন ১২ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণের বড় অংশ ইতিমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে। গত জুনে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় ৫২ দশমিক শতাংশ বা ৪৮ হাজার কোটি টাকায়, যা ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া ব্যাংকটিতে এস আলম গ্রুপের ঋণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এ ব্যাংকে লম্বা সময় ধরে এমডি ছিলেন আবদুছ ছালাম আজাদ। ২০২৩ সালের এপ্রিলে যোগ দেন মো. আবদুল জব্বার। তাঁকে সরিয়ে দেওয়ায় জনতা ব্যাংক এখন এমডি–শূন্য।

অগ্রণী ব্যাংকে দীর্ঘ সময় অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত চেয়ারম্যান ও শামস উল ইসলাম এমডি ছিলেন। তাঁদের সময়ে দেওয়া ঋণ ইতিমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে। গত জুনে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের হার ৩০ শতাংশ ছাড়ায়, যা পরিমাণে ২১ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ব্যাংকটির এমডির দায়িত্বে ছিলেন মো. মুরশেদুল কবীর। সম্প্রতি তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে হলমার্ক কেলেঙ্কারি থেকে সোনালী ব্যাংক যে শিক্ষা নিয়েছে, তা ব্যাংকটির আর্থিক ভিত্তি মজবুত করতে ভূমিকা রেখেছে। ফলে ব্যাংকটি বড় ঋণ বিতরণে না ঝুঁকে ট্রেজারি ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছে। ফলে নতুন করে কোনো ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কমেছে।

সোনালী ব্যাংকের মোট ঋণের প্রায় ১৫ শতাংশ এখন খেলাপি, যা আগে হলমার্কসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে গেছে। সম্প্রতি অপসারিত সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম ২০২২ সালের আগস্টে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

রূপালী ব্যাংকের ২৩ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে, যার পরিমাণ ১০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। এই ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরও ২০২২ সালের আগস্ট থেকে দায়িত্বে ছিলেন। তাঁকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানায়, সরকারি ব্যাংকগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা নতুন করে সাজানো হচ্ছে। এ জন্য ব্যাপক রদবদল চলছে। আলোচ্য ছয় ব্যাংকের এমডি হওয়ার যোগ্য এমন ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে সরকারি ব্যাংকের বর্তমান ও অবসরে যাওয়া ডিএমডিদের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের দক্ষ ব্যাংকারদের নামও ভাবা হচ্ছে। কারণ, সরকারি খাতে ব্যাংক চালানোর মতো দক্ষ ও সৎ ডিএমডির ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করা হয়।

তারিক/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে