ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠজনরা যারা ডিসি হলেন

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১২ ০৭:১২:০৬
হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠজনরা যারা ডিসি হলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক-ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের বেশিরভাগই শেখ হাসিনা সরকারের অতি ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, মেয়র এবং তৎকালীন সরকারের আস্থাভাজন দলবাজ সচিবদের পিএস (একান্ত সচিব) হিসাবে কাজ করেছেন।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ঢাকার ডিসি হিসাবে নিয়োগ পাওয়া তানভীর আহমেদ ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাবেক ডিসি মোমিনুর রহমানের ভাগনে। তিনি সাবেক আইন সচিব আবু সালেহ মো. জহিরুল ইসলামের পিএস ছিলেন। এছাড়া তিনি সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) সাজ্জাদুল ইসলাম শাহিনের নিকটাত্মীয়। বিগত সরকারের সময় অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা এবং জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের দেওয়া ডিসির ফিটলিস্টে তানভীর আহমেদের নাম ছিল।

ময়মনসিংহ জেলার ডিসি মফিদুল আলম চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাসিরের পিএস ছিলেন। তিনি সর্বশেষ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পিএস ছিলেন।

কুষ্টিয়ার ডিসি হিসাবে নিয়োগ পাওয়া ফারহানা ইসলাম সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীরের এলাকা রূপগঞ্জের ইউএনও ছিলেন। তিনি গোলাম দস্তগীরের মালিকানধীন গাজী টিভির সংবাদ পাঠিকা হিসাবে কাজ করছেন। তবে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

ঝিনাইদহের ডিসি মো. আব্দুল আওয়ালের বিরুদ্ধে কমলনগর ও কুমিল্লায় ইউএনও থাকা অবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিগত সরকারের সময় তৈরি করা ফিটলিস্টে তার নাম ছিল।

মাগুরার ডিসি মো. অহিদুল ইসলাম গত সরকারের সময় ৫ বছর মরিশাসে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

কক্সবাজার জেলার ডিসি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গত সরকারের সময় তিনি একটি মোটা বেতনে প্রকল্পে লিয়েনে পোস্টিং নিয়েছেন।

নোয়াখালীর ডিসি খন্দকার ইসতিয়াক ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। তার পিতা ও মামা গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি চারটি উপজেলায় এসিল্যান্ড ছিলেন।

খুলনার ডিসি মো. সাইফুল ইসলাম তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা এবং ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারির একান্ত সহচর ছিলেন। হবিগঞ্চে ইউএনও থাকাকালে তিনি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গত সরকারের সময় তিনি কলকাতা হাইকমিশনে উপ-হাইকশিনার হিসাবে কাজ করেছেন। বিগত সরকারের সময় তৈরি করা ডিসির ফিটলিস্টে তার নাম ছিল।

গোপলগঞ্জের ডিসি মো. কামরুজ্জামান বিগত সরকারের আস্থাভাজন হওয়ায় সৌদি আরবে ২০১৬-২০২১ পর্যন্ত কনসাল জেনারেল পদে নিয়োগ পেয়েছেন। রাজউকের পরিচালক ও হজ অফিসার হিসাবে পোস্টিং পেয়েছেন। গত সরকারের সময় তৈরি করা ডিসির ফিটলিস্টে তার নাম ছিল।

সিরাজগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ মনির হোসেন রাজউকের পরিচালক ছিলেন। তিনি সালমান এফ রহমানের সঙ্গে শেয়ারবাজার কারসাজির অপকর্মে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তার শতকোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় ইউএনও থাকা অবস্থায় ‘ম্যাজিস্ট্রেটের পা ধরে শিক্ষকের মাফ চাওয়ার ঘটনায়’ সমালোচিত হয়ে ইউএনও থেকে প্রত্যাহার হয়েছিলেন।

জামালপুরের ডিসি হাসিনা বেগম ঢাকা ডিসি অফিসে এলএও হিসাবে কাজ করেছেন। ইউএনও হিসাবে নরসিংদীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় তাকে তৎকালীন ডিসি অনুপযুক্ত কর্মকর্তা হিসাবে চিহ্নিত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠান।

কিশোরগঞ্জের ডিসি ফৌজিয়া খান বিগত সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। গত আগস্ট মাসে বিপ্লবের সময় বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সচিব জাহাঙ্গীর হোসেনের ডান হাত হিসাবে ভূমিকা রাখার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

রাজশাহীর ডিসি মো. মাহবুবুর রহমান পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমানের ভাগনিজামাই। বিগত সরকারের সময় ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তাঁর একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে সমালোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তিনি সেখানে লিখেছেন “we all are sheikh Hasina’s men”। তবে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

ফরিদপুরের ডিসি মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লাহ ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাবেক ডিসি মোমিনুর রহমানের ভাগনিজামাই। বর্তমান ঢাকার ডিসি তানভীর আহমেদের ভগ্নিপতি। পদোন্নতির পর পরই তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে ফুল দিতে গিয়েছেন। বিগত সরকারের সময় তৈরি করা ডিসির ফিটলিস্টে তার নাম ছিল।

শরীয়তপুরের ডিসি আব্দুল আজিজ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর একান্ত সচিব ছিলেন। তিনি সাবেক সরকারে কট্টর সমর্থক বলে অভিযোগ রয়েছে। পদোন্নতি পেয়ে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে ফুল দিতে গিয়েছেন। তবে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

পঞ্চগড়ের ডিসি মোহাম্মদ নায়িরুজ্জাম এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রাহমাতুম মুনিমের পিএস ছিলেন।

নীলফামারীর ডিসি শরীফা হকের মাঠ প্রশাসনে এক বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিগত সরকারের সময় গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নাটোরের ডিসি রাজীব কুমার সরকারের শুশুর যতীন কুমার সরকার শেরপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। যতীন সরকার ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

জয়পুরহাটের ডিসি সাইদুজ্জামান টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের ইউএনও থাকা অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারি অফিশিয়াল বনভোজনের আয়োজন করেছিলেন এবং সমালোচিত হওয়ার কারণে তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তিনি বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির পনের’শ কোটি টাকার প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। ঢাকায় এসিল্যান্ড থাকাকালীন সময়ে দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত। তবে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

চাঁদপুরের ডিসি মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনকে গত ২৭ মার্চ ২০২৪ রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে পদায়ন করে বিগত সরকার। এরপরও তাঁকে ডিসি পদে পদায়ন করা হয়েছে।

নেত্রকোনার ডিসি বনানী বিশ্বাস ময়মনসিংহের জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এবং স্বামী ডাঃ বিবেক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের নেতা।

এছাড়া নিয়োগ পাওয়া বাকি ডিসিদের আরও অনেকের বিরুদ্ধে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে