ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ভারতীয় পুরুষদের সমস্যা আছে: কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর

২০২৪ আগস্ট ৩১ ০৭:১৮:৪৪
ভারতীয় পুরুষদের সমস্যা আছে: কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের ‘মলিউড’ হিসেবে পরিচিত কেরালার মালয়লম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ঘিরে হ্যাশট্যাগ মি-টু আন্দোলন নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। একের পর এক অভিনেত্রীরা মুখ খুলছেন। সিনেমার শুটিং কিংবা সেটে কখনো অভিনেতা, কখনো পরিচালক কিংবা প্রযোজকের হাতে তাঁরা কীভাবে যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছেন—তা ফাঁস করে দিচ্ছেন অভিনেত্রীরা।

এখন পর্যন্ত ১৭ জন অভিনেত্রী এই অভিযোগ জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় সমাজের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন কেরালা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের সাংসদ শশী থারুর।

তিনি মন্তব্য করেছেন, ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে সমস্যা আছে। নারীর বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যদি কোনো আশা না থাকে, যদি নির্মূল না হয়, তাহলে এটি ভয়াবহ সমস্যা বলে তিনি মনে করেন।

এনডিটিভির সঙ্গে কথা বলার সময় পদ্ধতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে মলিউডে যৌন নিপীড়নের ঘটনা উন্মোচনের জন্য নিজের সমর্থন প্রকাশ করেন শশী থারুর। তিনি উল্লেখ করেন, ‘২০১২ সালের নির্ভয়া ট্র্যাজেডি এবং ২০২৪ সালে সাম্প্রতিক আরজি কর হাসপাতালের ধর্ষণ এবং হত্যার মতো আলোচিত মামলা থাকার পরও এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় যথেষ্ট অগ্রগতি নেই। তিনি বলেন ‘মনে হচ্ছে এক ডজন বছরেও কিছুই পরিবর্তন হয়নি।’

সাক্ষাৎকারে গণমাধ্যমে রিপোর্ট করা যৌন নির্যাতনের উদ্বেগজনক হার তুলে ধরে বিষয়টিকে একটি দৈনন্দিন ঘটনা হিসাবে বর্ণনা করেছেন শশী থারুর। এসব খবর বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নারীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলেও মনে করেন তিনি।

ভারতে ‘হ্যাশট্যাগ মি-টু’ (#MeToo) আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কেরালার ভূমিকার প্রশংসা করেছেন কেরালার প্রভাবশালী এই রাজনীতিবিদ। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে আটকে থাকা সমস্যাগুলো প্রকাশে রাজ্যের ভূমিকারও প্রশংসা করেছেন তিনি।

তবে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে বিচারপতি হেমা কমিটির রিপোর্ট প্রকাশে কেরালা সরকারের বিলম্বকে তিনি ‘অমার্জনীয় অপরাধ’ হিসাবে অভিহিত করেছেন।

মলিউডের বাঘা বাঘা কর্তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগের মধ্যে ইতিমধ্যে মালয়লম মুভি অ্যাক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সহ বেশ কয়েকজন অভিনেতাও পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগের ঘটনাগুলোকে সঠিক মনে করলেও এটি পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন কংগ্রেসের এই সাংসদ। এই ক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের সুযোগ করে দেওয়া সিস্টেমকেই বদলানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি।

কর্মক্ষেত্রে তিনি নারীদের জন্য বিশ্রামাগার এবং নিরাপদ স্থানের মৌলিক সুবিধাগুলোর ওপরও জোর দেন। একটি স্বাধীন ফোরাম প্রতিষ্ঠার আহ্বানও জানান থারুর, যেখানে নারীরা নিরাপদে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা গেছে, মালয়লম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে হেমা কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরই একের পর এক অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব মালয়লম মুভি আর্টিস্টস নামের প্রভাবশালী সংগঠনটি।

সাম্প্রতিককালে যেসব মালয়লম অভিনেত্রী যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন তাঁদের মধ্যে মিনু মুনীর নামে এক অভিনেত্রী অন্যতম। তিনি মলিউডের প্রভাবশালী এম মুকেশ, জয়সূর্য, মানিয়াপিল্লা রাজু, ইদাভেলা বাবু সহ অন্যান্য অভিনেতার বিরুদ্ধে সিনেমার শুটিং চলাকালীন যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন।

মিনু মুনীর দাবি করেন, একটি সিনেমার শুটিং চলাকালীন ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিনেতা জয়সুরিয়া তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেন এবং জোর করে চুম্বন করেন। এই ঘটনায় ভয় পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান অভিনেত্রী। পরে জয়সূর্য মিনুকে প্রস্তাব দেন- তার সঙ্গে থাকলে তিনি আরও অনেক ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাবেন।

এছাড়া মালায়ালাম মুভি আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ইদাভেলা বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন মিনু। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে ইদাভেলা বাবু তাকে যৌন শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করেছেন।

বর্তমানে সিপিএম বিধায়ক অভিনেতা মুকেশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের করেছেন মিনু। অভিনেত্রী দাবি করেছেন, তিনি শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে না চাওয়ায় তাকে কমিটির সদস্যপদ দেওয়া হয়নি।

মিনুর ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর এগিয়ে আসেন অভিনেত্রী সোনিয়া মালহারও। তিনি অভিযোগ করেছেন, ২০১৩ সালে একটি চলচ্চিত্রের সেটে একজন অভিনেতা তাকে যৌন হয়রানি করেছিলেন। এরপর একের পর এক অভিনেত্রী তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া যৌন হয়রানির ঘটনাগুলি প্রকাশ করছেন।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে