ঢাকা, রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

বংশালে হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের কান্নার রোল

২০২৪ জুন ১০ ০৫:৪৬:৫০
বংশালে হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের কান্নার রোল

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বংশালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিবাসীদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তাদের উচ্ছেদ করা হবে না। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির দুই দিন পর আবারও ১২ ঘণ্টার মধ্যে উচ্ছেদের সময় দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

এই খবর প্রচার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোববার (০৯ জুন) ক্ষোভে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ। এক পর্যায়ে তারা কলোনির মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনায় বসেন। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। সবার চাওয়া একটাই- তাদের উচ্ছেদ না করে পুনর্বাসন করা হোক।

রোববার সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা যায়, কলোনির ঘরে ঘরে রীতিমতো কান্নার রোল। কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবে তারা এই নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ। একদিকে ক্ষুব্ধ হরিজন সম্প্রদায়ের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে নগর ভবনে সাক্ষাৎ করেন।

সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যায় বাংলাদেশ হরিজন ঐক্যপরিষদের সভাপতি কৃষ্ণলাল জানান, আমরা মেয়রকে সকল সমস্যার কথা খুলে বলেছি। উনি বলেছেন, তাকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা হয়নি। যে কারণে কলোনির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে তিনি অবহিত হতে পারেননি।

মেয়র তাদের বলেছেন, এই প্রেক্ষাপটে পুরো কলোনি উচ্ছেদ করা হবে না। ভবনের জন্য কিছু অংশ ভাঙা হবে। বাদবাকি কলোনিতে সবাই বসবাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মেয়র। সঠিক তথ্য না দেওয়ায় মেয়র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেও জানান তিনি। একপর্যায়ে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের ডেকে এনে মেয়র কথা বলেছেন বলেও জানান কৃষ্ণলাল।

এদিকে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত এই কলোনিতে বসবাস করা এমন ৬৬ জনের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র। এই ঘটনায় বাদবাকি বাসিন্দাদের মধ্যে উচ্ছেদের চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, জোর করে চাবি নিতে বাধ্য করা হয়েছে পল্লিতে বসবাসকারী পরিচ্ছন্নকর্মীদের।

সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর ধরে বসবাস করা এই কলোনিবাসীদের উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। উচ্ছেদের পর জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

হরিজন সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, কালোনিতে তাদের বসবাসে ভবন নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। যখন তারা উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখছেন ঠিক তখন তাদের উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছেন কলোনিতে বসবাসকারী প্রায় তিন হাজারের বেশি মানুষ। তারা সবাইকে পুনর্বাসনের দাবি জানান।

সিটি কর্পোরেশন জানিয়েছে, মিরনজিল্লা কলোনিতে ৩ ও ৪ জুন উচ্ছেদ অভিযান চালাতে চার প্লাটুন পুলিশ চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর প্রথম চিঠি পাঠানো হয়েছে। কলোনির বাসিন্দারা বলছেন, ৪০০ বছর পূর্বে তাদের ভারত থেকে এই অঞ্চলে পরিচ্ছন্ন কাজের জন্য আনা হয়। বর্তমানে সাত শতাধিক পরিবার এখানে বসবাস করছেন।

বসবাসকারীদের মধ্যে কিছু মানুষ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত। বাদবাকি দুই শতাধিক পরিবারের সদস্যদের সবাই কোনো না কোনো সময়ে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের অনেকেই মারা গেছেন। কেউবা চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এমন বাস্তবতায় অবৈধ বলে সিটি করপোরেশনে কর্মরতদের বাইরে অন্যদের উচ্ছেদ করলে পথে নামতে হবে। তা ছাড়া হরিজন সম্প্রদায়ের সবার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা এই কলোনি।

শেয়ারনিউজ, ১০ জুন ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে