ঢাকা, শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে তৈরি সয়াবিন বোতলজাত করে বাজারে বিক্রি!

২০২৪ মে ১৬ ২২:৩২:২৫
বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে তৈরি সয়াবিন বোতলজাত করে বাজারে বিক্রি!

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিষাক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত ভেজাল সয়াবিন তেল বোতলজাত করে বাজারে বিক্রি করছে একটি চক্র, যা বাইরে ফিটফাট এবং ভিতরে সদরঘাট প্রবাদের মতো। তবে ওই ব্র্যান্ডের কোনো অনুমোদনও নেই।

রাতের অন্ধকারে ইলিয়াস আহমেদ নামের এক অসাধু ব্যবসায়ী সাভার পৌর এলাকার বাড্ডা ভাটপাড়া মহল্লায় এক বিদেশীর বাসা ভাড়া নিয়ে একটি খোলা ও ভেজাল তেলের ব্যারেল থেকে মোটর পাম্পের মাধ্যমে বোতলজাত করে ‘আল মদিনা সিটি’ লোগো লাগিয়ে বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই চক্রটি বাইরে খোলা বাজার থেকে সয়াবিন সংগ্রহ করে রান্নার প্রধান উপকরণ ভোজ্যতেলে পাম অয়েল ও বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশ্রনে ভেজাল অস্বাস্থ্যকর উপাদান মিশিয়ে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় ড্রামে সংরক্ষণ করে। পরে ওই বড় ড্রাম থেকে ৫, ৩, ২, ১ লিটার ও ৫০০ এমএল প্লাস্টিকের বোতলে ঢেলে বোতলের গায়ে ‘আল মদিনা সিটি’ লেবেল লাগিয়ে বাজারজাত করছে।

আবার কিছু কিছু লেবেলে বিএসটিআইয়ের লগোও রয়েছে। যেখানে বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদনই নেই। আর এসব তেলে তৈরি খাদ্য আহারে নানা রোগ-ব্যাধিসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি টিনসেড ঘরের একটি মাত্র মূল গেইট যেটি ভিতর থেকে বন্ধ রয়েছে। ভিতরে শ্রমিকরা তৈল বোতলজাত করছে। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দেওয়ার পরও গেইট খোলেনি কেউ।

তবে গণমাধ্যমকর্মীর সাথে গোপনে কথা হয় ভেজাল তেল তৈরির কারখানার এক কর্মচারীর সাথে। তিনি পরিচয় গোপন রেখে বলেন, এখানে বড় বড় ড্রাম থেকে খোলা তেলের সাথে পামওয়েল ও বিভিন্ন কেমিক্যালে ক্যামিকেল মিশিয়ে তৈরি সয়াবিন বোতলজাত করে ‘আল মদিনা সিটি’ লগো লাগিয়ে বাজারজাত করা হয়।

তিনি বলেন, এখানে ৭ জন কর্মচারী কাজ করে। ৫, ৩, ২, ১ লিটার ও ৫০০ এমএল তেলের বোতল নিজস্ব কর্মচারী দিয়ে সাভারের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, বলিয়ারপুরসহ গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় এসব বোতলজাত তেল বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মুনাফা আয় করছে।

তিনি আরো বলেন, এই কারখানার মালিক ইলিয়াস আহমেদ। তার বাড়ি ধামরাই এলাকায় কিন্তু তিনি থাকেন ভাটপাড়া মহল্লায়।

ওই বাড়ির আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি তারা বিভিন্ন ভেজাল উপাদান দিয়ে সয়াবিন তেল তৈরি করে বোতলজাত করে বিক্রি করে। এই প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করার মতো কোনো সাইনবোর্ডও নেই।

প্রবাসির ওই বাড়ির কেয়ারটেকার মোহাম্মদ আলী বলেন, ৫/৬ মাস আগে ইলিয়াস আহমেদ তেলের কারখানা করার জন্য বাড়িটি ১৮ হাজার টাকা মাসে ভাড়া নেন।

কারখানার কোনো অনুমোদন আছে কিনা অথবা ভেজাল নাকি আসল তেল তৈরি হয় তাও তিনি জানেন না। তবে তিনি বলেন, এরকম সাভারে অনেক অবৈধ কারখানা আছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর) রমজান আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে আপনাকে অবহিত করবো।

এ বিষয়ে ভেজাল সয়াবিন তৈরির মূলহোতা ইলিয়াস আহমেদের সাথে যোগাযোগের জন্য তার মুঠফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও জবাব দেননি। তবে পরে তিনি ফোন করে তার কারখানার যে অনুমোদন নেই তা অকপটে স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, তার সাথে জনি নামে আরেকজন পার্টনার রয়েছে। কারখানাটি নতুন শুরু করেছি। ভেজাল তেলের বিষয়টিও তিনি স্বীকার করেন।

একপর্যায়ে এই প্রতিবেদকের সাথে দেখা করে তাকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করারও চেষ্টা করেন ইলিয়াস।

শেয়ারনিউজ, ১৬ মে ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে