ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

রাগ সামলাতে না পারলেই বিপদ, জানুন শান্ত থাকার কৌশল

২০২৫ ডিসেম্বর ১৯ ১১:১০:০৫
রাগ সামলাতে না পারলেই বিপদ, জানুন শান্ত থাকার কৌশল

নিউজ ডেস্ক: মানুষের আবেগের জগতে রাগ একটি স্বাভাবিক অনুভূতি। জীবনের নানা পরিস্থিতিতে অবিচার, অপমান, অবহেলা কিংবা অতিরিক্ত চাপ থেকে এই রাগের জন্ম হয়। তবে এই অনুভূতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন তা মানুষের চিন্তা, সিদ্ধান্ত ও আচরণকে ক্ষতিকর পথে ঠেলে দেয়। এক মুহূর্তের রাগেই নষ্ট হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, ভুল সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারে নিজের জীবন। তাই রাগ হওয়া নয়, বরং রাগের সময় নিজেকে শান্ত রাখতে পারাই সবচেয়ে জরুরি।

রাগ সাধারণত হঠাৎ করে আসে না। এর আগে শরীর ও মন নানা সংকেত দিতে শুরু করে। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, শরীর গরম লাগতে থাকে, চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে কিংবা কথা বলার স্বর চড়া হয়ে যায়। এসব লক্ষণ বুঝতে পারলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগেই নিজেকে সামলানো সম্ভব।

রাগের মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ভুল হলো সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখানো। এই সময় কয়েক সেকেন্ড বা মিনিট নিজেকে থামিয়ে রাখা প্রয়োজন। নিজের মনে ‘এখন নয়’ বলে সময় নেওয়াই অনেক ক্ষেত্রে বড় ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে। এই সামান্য বিরতিটুকুই আবেগ ও বিবেকের মধ্যে একটি নিরাপদ দূরত্ব তৈরি করে।

রাগের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসও অস্থির হয়ে পড়ে। তখন ইচ্ছাকৃতভাবে ধীরে ও গভীর শ্বাস নেওয়া স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করতে সাহায্য করে। কয়েকবার ধীরে শ্বাস নিয়ে ছাড়লেই শরীর ও মনের উত্তেজনা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।

যে পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে রাগ বেড়েছে, সেখান থেকে সাময়িকভাবে সরে আসাও কার্যকর পদ্ধতি। এটি পালিয়ে যাওয়া নয়, বরং নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফেরানোর একটি কৌশল। একটু হাঁটা, খোলা জায়গায় দাঁড়ানো কিংবা একা বসে থাকা অনেক সময় রাগ প্রশমনে সহায়ক হয়।

রাগের মুহূর্তে মনের ভেতরের কথাবার্তা বাস্তবের চেয়ে অনেক বেশি নেতিবাচক হয়ে ওঠে। তখন নিজেকে প্রশ্ন করলে পরিস্থিতির গুরুত্ব নতুনভাবে ধরা পড়ে। বিষয়টি সত্যিই কতটা বড়, ভবিষ্যতে এর প্রভাব থাকবে কি না কিংবা এই রাগে নিজেরই ক্ষতি হচ্ছে কি না—এই ভাবনাগুলো রাগের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।

রাগ মানে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত শক্তি। সেই শক্তি সুস্থভাবে বের করে দেওয়ার জন্য শারীরিক নড়াচড়া খুব কার্যকর। হাঁটা, হালকা ব্যায়াম বা স্ট্রেচিংয়ের মাধ্যমে শরীর যেমন হালকা হয়, তেমনি মনও শান্ত হতে শুরু করে। নিয়মিত শরীরচর্চা রাগ জমে ওঠার প্রবণতা কমায়।

রাগ চেপে রাখা কোনো সমাধান নয়। তবে রাগ প্রকাশের ধরন গুরুত্বপূর্ণ। চিৎকার বা আঘাতের বদলে শান্তভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করলে সংঘাত কমে যায়। ‘আমি কষ্ট পেয়েছি’ বা ‘আমি বিরক্ত বোধ করছি’—এভাবে কথা বললে অন্য পক্ষও বিষয়টি বুঝতে পারে।

অনেক সময় সবকিছু নিজের ইচ্ছামতো না হওয়ায় রাগ জন্ম নেয়। কোন বিষয় নিজের নিয়ন্ত্রণে আর কোনটি নয়—এই সীমা বুঝতে পারলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাবার ও নিয়মিত বিশ্রাম দীর্ঘমেয়াদে রাগের প্রবণতা কমাতে সহায়ক। প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়াও সচেতনতার অংশ।

রাগ মানুষকে দুর্বল করে না, কিন্তু রাগের কাছে হার মানা মানুষকে ক্ষতির মুখে ফেলে। যে ব্যক্তি রাগের মুহূর্তে নিজেকে শান্ত রাখতে পারে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সবচেয়ে শক্তিশালী। কারণ নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারা মানেই নিজের জীবনকে সম্মান করা।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

লাইফ স্টাইল এর সর্বশেষ খবর

লাইফ স্টাইল - এর সব খবর



রে