ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

ছয় বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছোঁবে বাংলাদেশের ফার্মা খাত

২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১৭:৫৮:০৩
ছয় বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক ছোঁবে বাংলাদেশের ফার্মা খাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প ২০২৫ সালের মধ্যে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের জিডিপি’তে ১.৮৩ শতাংশ অবদান রাখা এই শিল্প, যার উৎপাদিত পণ্য ১৫০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হয়, তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই সময়েও কিছু অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এবং প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে দেশের শেয়ারবাজার হতে পারে অন্যতম প্রধান সহায়ক শক্তি।

বুধবার (০৪ নভেম্বর ২০২৫) গুলশানে বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি (বিএপিআই)-এর কার্যালয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও বিএপিআই-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএপিআই সভাপতি ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির।

ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, দেশের শেয়ারবাজারকে আরও কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রোথ-ওরিয়েন্টেড করার লক্ষ্যে ডিএসই একটি রূপান্তর যাত্রার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "আমরা চাই শেয়ারবাজার যেন দেশের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সরবরাহের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়।" সরকার এখন ব্যাংক-নির্ভর অর্থনীতি থেকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ আর্থিক ব্যবস্থায় রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছে। তাই, ডিএসই এখন গ্রোথ-ওরিয়েন্টেড এবং গ্রাহক-কেন্দ্রিক শেয়ারবাজার গড়ার পথে কাজ করছে।

তিনি জানান, আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ব্লু-চিপ কোম্পানির আবেদন দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, তথ্যপ্রবাহ ও স্বচ্ছতা বাড়াতে ডিএসই সেন্ট্রাল ইনফরমেশন আপলোড সিস্টেম চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বর্তমানে ডিএসই-তে ৩৪টি ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যাল কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।

বিএপিআই সভাপতি আব্দুল মুক্তাদির বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজারকে আরও গতিশীল করতে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের সরবরাহ, নীতিগত স্থিতিশীলতা এবং কর কাঠামোর সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে বেসরকারি খাতের ঋণগ্রহণের হার হ্রাস পাচ্ছে এবং টানা তৃতীয় মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও নিম্নমুখী। তিনি মনে করেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি আস্থা ফিরিয়ে আনতে নীতি, আইন ও বিধিমালায় ঘন ঘন পরিবর্তন না আনা উচিত।

মুক্তাদির আরও বলেন, বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট কোম্পানির করহার প্রায় সমান হওয়ায় তালিকাভুক্তির প্রণোদনা কমে গেছে। তাই পাবলিক কোম্পানিগুলোর জন্য কর সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে আরও প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হয়।

ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো স্বচ্ছতা ও কর সুবিধা, যা বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়ায়। ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুর রহমান জানান, ডিএসই এখন তিনটি প্ল্যাটফর্মে লিস্টিং সুবিধা দিচ্ছে—মূল বোর্ড, এসএমই বোর্ড ও অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি), যার মধ্যে এটিবি উদীয়মান উদ্যোক্তাদের জন্য খুবই উপযোগী।

ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন সৎ ও সক্ষম উদ্যোক্তাদের শেয়ারবাজারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ভালো উদ্যোক্তারা যদি বাজারে না আসে, তবে দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো সুযোগ নেয়।” অন্যদিকে, রেনাটা পিএলসি’র সিইও সৈয়দ এস. কায়সার কবির উল্লেখ করেন যে, লিস্টিংয়ের মূল সুবিধা হলো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বৃদ্ধি, যা বাজারে আস্থা আনে। হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিইও মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান মনে করেন, বড় কোম্পানিগুলোর সম্প্রসারণে যে বিপুল ফান্ডের প্রয়োজন, তা ব্যাংকের পরিবর্তে শেয়ারবাজার থেকে সংগ্রহ করলে ব্যয় ও ঝুঁকি কমবে।

পরিশেষে, ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “পরিবর্তন আসবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা, আস্থা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।”

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে