ঢাকা, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

৫ বছর ধরে ঘর থেকে বের না হওয়া পরিবারের রহস্য উম্মোচন 

২০২৫ অক্টোবর ১৩ ০৯:৫৬:৪০
৫ বছর ধরে ঘর থেকে বের না হওয়া পরিবারের রহস্য উম্মোচন 

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বনশ্রীর একটি ফ্ল্যাটে বসবাসরত একটি পরিবারের অস্বাভাবিক ও রহস্যজনক জীবনযাপন নিয়ে সম্প্রতি আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৮ সালে মনিরুল ইসলাম তার স্ত্রী নাসরিন আক্তার এবং দুই ছেলে—আজিজুল ইসলাম ও মানজারুল ইসলামকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে ভাড়া ওঠেন। এরপর থেকে দীর্ঘ সাত বছর ধরে পরিবারটি সমাজ ও স্বাভাবিক জীবনধারা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

জানা যায়, পরিবারের দুই সন্তানের স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে পাঁচ বছর ধরে। পরিবারের সদস্যরা কেউই বাড়ির বাইরে যান না। এমনকি ফ্ল্যাটের ভাড়াও দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া রয়েছে। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে এই পরিবারের অস্বাভাবিক জীবনযাপন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তাদের ওপর তদন্ত শুরু করে।

তদন্ত করতে গিয়ে বাড়ির কেয়ারটেকার পরিবারের বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি, বরং দাবি করেন, পরিবারটি ইতোমধ্যেই বাসা ছেড়ে চলে গেছে। তবে আজিজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়, যিনি জানান, তারা এখনও ওই ফ্ল্যাটেই অবস্থান করছেন।

পরিবারটি অভিযোগ করেছে, মনিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়ার সঙ্গে জড়িত। মনিরুলের বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রমাণও এসেছে—যার মধ্যে রয়েছে অন্য এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর ভিডিও কল, চ্যাটিংয়ের স্ক্রিনশট, ছবি এবং ভিডিও। অভিযোগ রয়েছে, মনিরুল বিভিন্ন নারীকে অনৈতিক টেক্সট ও ভিডিও পাঠিয়েছেন।

খিলগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক ওবায়দুল হক রুবেল জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মনিরুলকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল।

মনিরুলের স্ত্রী নাসরিন আক্তার খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন, যেখানে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপ, মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার, মাদক চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এবং প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ তুলেছেন।

অন্যদিকে মনিরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, বাইরে থাকলেও পরিবারের সব খরচ তিনি বহন করছেন, নিয়মিত বাজার করেন এবং ভাড়াও পরিশোধ করেন।

কিন্তু নাসরিন আক্তার ও তার দুই ছেলে মনিরুলের বক্তব্য মানতে নারাজ। তারা মনে করেন, মনিরুল পরকীয়ার পাশাপাশি হয়তো কোনো বড় অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িত। পরিবারের সদস্যরা মনিরুলের সামান্য রাগ বা উচ্চস্বরে কথা বলাকেও হত্যার হুমকি বলে মনে করেন। তারা বিশ্বাস করেন, বাসা থেকে বের হলেই তাদের হত্যা করা হতে পারে। এই সন্দেহের কারণে তারা শুধু স্বামী নয়, ফ্ল্যাট মালিকসহ আশপাশের অনেককেই সন্দেহের তালিকায় ফেলেছেন।

ফ্ল্যাট মালিক ইতোমধ্যে পরিবারটিকে বাসা ছাড়ার অনুরোধ করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারটি যদি আইনি সহায়তা চায়, তবে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।

এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, পরিবারটির আচরণ ‘প্যারানয়েড স্কিটজোফ্রেনিয়া’ অথবা ‘ডিলিউশনাল ডিসঅর্ডার’-এর লক্ষণ বহন করে। তার ভাষায়, “এই ধরণের রোগীরা অযৌক্তিক সন্দেহে ভোগেন এবং আশপাশের সবার মধ্যে শত্রুতা খুঁজে পান। এতে তারা স্বাভাবিক জীবন থেকে ছিটকে পড়েন।” তিনি এই পরিবারটিকে দ্রুত মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

মনিরুল ইসলাম দাবি করলেও যে তার পরিবারে কিছুই হয়নি, স্ত্রী ও সন্তানরা তার আচরণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এই অস্বাভাবিক জীবনযাপন শুধু একটি পরিবারের ব্যক্তিগত সংকট নয়—এটি সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং অবহেলার প্রতিফলন।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে