ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

সাবেক সংসদ সদস্য কারাগারে বসিয়েছেন এসি, লাগিয়েছেন টাইলস

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৯ ১০:৪৭:০৫
সাবেক সংসদ সদস্য কারাগারে বসিয়েছেন এসি, লাগিয়েছেন টাইলস

নিজস্ব প্রতিবেদক : নোয়াখালী জেলা কারাগারে আটক থাকা শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে ঘিরে নানা বিতর্ক ও অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সাধারণ বন্দী নন, বরং 'ভিআইপি সুবিধাভোগী' হিসেবে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন কারাগারের ভেতরেই।

সূত্রমতে, ১৯৬৯ সালে নির্মিত নোয়াখালী জেলা কারাগারে মাত্র তিনটি ভিআইপি রুম রয়েছে, যার একটি দখল করে আছেন একরাম।এ রুমটি নতুন টাইলস দিয়ে সাজানো হয়েছে, এবং সেখানে বসানো হয়েছে এয়ার কন্ডিশনার (এসি)।এছাড়া নিয়মিতভাবে বাইরে থেকে খাবার আসছে তার জন্য, যা কারা বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তার আত্মীয়-স্বজন ও অনুসারীরা কারাগারে যাতায়াত করছেন দিনে-রাতে।গত ঈদে তিনি পুরো কারাগারের বন্দীদের জন্য নগদ অর্থ, খাবার ও অন্যান্য সুবিধা দিয়েছেন, যা ‘জনদরদী আচরণ’ হিসেবে দেখা হলেও আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ।

এই সমস্ত কর্মকাণ্ড কারা বিধির চরম লঙ্ঘন হলেও, কোনো কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস দেখাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।কারা কর্মকর্তাদের নীরবতা প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর।

একসময় একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং পরিচালনা, চাঁদাবাজি, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, এমনকি খুন ও রাহাজানির মতো ভয়ংকর অপরাধের অভিযোগ উঠেছিল।তার বিরুদ্ধে নোয়াখালী জেলায় বিরোধী মত দমন ও একচ্ছত্র রাজনৈতিক দখলদারিত্ব কায়েম করার অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিন।

তিনি নিজের প্রভাব আরও বিস্তৃত করতে স্ত্রী, পুত্র ও ভাগ্নেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধি পদে বসান, যাকে অনেকে ব্যঙ্গ করে বলেন "একরামের রাজপরিবার"।

স্ত্রী শিউলি আকরাম – কবিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান

পুত্র শাবাব একরাম – সুবর্ণচর উপজেলার চেয়ারম্যান

ভাগ্নে রায়হান – কবিরহাট পৌরসভার মেয়র

তার সবচেয়ে আলোচিত দ্বন্দ্ব ছিল বসুহাট পৌরসভার মেয়র মির্জা কাদেরের সঙ্গে।দুই নেতার মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ, এমনকি মির্জা কাদেরকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে থানায় জিডি করা হয়, যা একসময় জাতীয় রাজনীতির আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছিল।

২০২৫ সালের জুলাইয়ে রাজনৈতিক পালাবদলের সময় তাকে আটক করা হয়।তবে কারাগারে এসেও তার বিলাসিতা ও প্রভাবমুক্ত হয়নি।আদালতে আনা হলে হাতকড়া পরানো হয় না, এবং সাধারণ বন্দীদের মতো আচরণ করা তো দূরের কথা, তার সঙ্গে যেন একজন 'ক্ষমতাবান অতিথির' মতো আচরণ করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, কারাগারে বসেই তিনি নোয়াখালীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন, এবং স্থানীয় প্রশাসনের অনেকেই এখনও তার প্রভাবের বাইরে নয়।

একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগগুলো শুধুই একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের বিলাসিতা নয়, বরং আইনের শাসনের দুর্বলতা ও কারা ব্যবস্থার ন্যায়ের প্রতি প্রশ্নবোধক চিহ্ন।সরকারি ও বিচারিক মহলে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে