ঢাকা, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

হাসিনার ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠার সহযোগী ছিলেন যারা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৭ ১১:৪৩:৩৩
হাসিনার ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠার সহযোগী ছিলেন যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে "জুলাই গণহত্যাকাণ্ড" নামে পরিচিত একটি ঘটনার বিচার প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। 'আমার দেশ' পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন, যেখানে তিনি শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী উত্থানের পটভূমি এবং তাতে জড়িত বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা তুলে ধরেছেন।

মাহমুদুর রহমান তার সাক্ষ্যে উল্লেখ করেছেন যে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত গণহত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নিকৃষ্টতম ফ্যাসিবাদী শাসকের পতন হয়েছে। তার মতে, এই ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার পেছনে একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা ছিল, যেখানে বাংলাদেশের রাজনীতি, বিভিন্ন সরকারি বিভাগ এবং একটি বিদেশি শক্তি জড়িত ছিল।

মাহমুদুর রহমান তার সাক্ষ্যে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতামূলক ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে:বিচার বিভাগ: বিচারপতি খায়রুল হক, বিচারপতি এসকে সিনহা, বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, বিচারপতি নিজামুল হক এবং বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে বিশেষভাবে ফ্যাসিবাদকে শক্তি যোগানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

আইনজীবী: সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক আইন সচিব দুলাল, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুদ্দিন, সাবেক চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত, দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এবং মোশারফ হোসেন কাজলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ বাহিনী: সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ এবং সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে মনিরুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান, হারুনুর রশিদ, বিপ্লব সরকার, মেহেদী হাসান, প্রলয় কুমার জোয়ারদার, হাবিবুর রহমানসহ অনেককে ফ্যাসিবাদী সরকারের 'লাঠিয়ালের' কাজ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

রাজনৈতিক নেতৃত্ব: জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, রওশন এরশাদ, জিএম কাদের, ১৪ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ (হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, দিলীপ বড়ুয়া, নজিবুল বাশার, ফজল হোসেন বাদশা, শিরিন আখতার), এবং তাদের সঙ্গীরা ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই): ২০০৮ সালে জেনারেল মইন ইউ আহমেদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ্দুজ্জামান চৌধুরী, তৎকালীন ডিজিএফআই কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আমিন, ব্রিগেডিয়ার বারি এবং ব্রিগেডিয়ার মামুন খালেদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়াও, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোল্লা ফজলে আকবর, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মামুন খালেদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আকবর হোসেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল আমিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল তাবরেজ শামস এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদুল হককে গুম ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

বিদেশি শক্তি: বাংলাদেশের বাইরে থেকে ভারতের সংশ্লিষ্টতা উল্লেখ করা হয়েছে, বিশেষ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর লেখা 'দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস' বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে, ২০০৮ সালের পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় আরোহণে জেনারেল মইনের সহযোগিতা এবং ভারতের ভূমিকা ছিল। মাহমুদুর রহমান অভিযোগ করেছেন যে, ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় তার আধিপত্য বজায় রাখতে সবসময় চেষ্টা করেছে এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী উত্থানের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি ছিল।

এই মামলার পরবর্তী শুনানি এবং বিচার প্রক্রিয়ার ফলাফল বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই অভিযোগগুলো যদি প্রমাণিত হয়, তবে তা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা, সামরিক বাহিনী, পুলিশ এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে